হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নোয়াখালীর কবিরহাটে অস্ত্রের মুখে এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়েছে। ওই নারীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. খলিল উল্যা বৃহস্পতিবার দুপুরে জানিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ওই নারীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি।
এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তার মা ও গৃহবধূর সদ্য কারামুক্ত স্বামী। হাসপাতাল থেকে এ মেডিকেল রিপোর্ট এদিন নোয়াখালীর পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়।
এদিকে গণধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় জামাল উদ্দিন নামে আরও এক আসামিকে বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নোয়াখালী ডিবি কার্যালয়ের পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাকির হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
জামাল কবিরহাট উপজেলার নবগ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে। দুপুরে তাকে নোয়াখালী ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণ মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, জামালকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ওই নারী ও তার স্বামী বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার বিষয়টি অবিশ্বাস্য।
ওই নারী বলেন, গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে সিঁধ কেটে তার ঘরে প্রবেশ করে যুবলীগ কর্মী জাকির হোসেন জহিরসহ সাতজন। এ সময় তার মা ও তিন সন্তানকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে ধর্ষণ করে জাকিরসহ চারজন।
তিনি চিৎকার দিতে চাইলে তার সন্তান ও মাকে জবাইয়ের হুমকি দেওয়া হয়। পরদিন শনিবার দুপুরে তিনি পরনে থাকা জামা-কাপড় নিয়েই কবিরহাট থানায় মামলা করতে যান।
এ সময় থানার ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাসান ধর্ষণের আলামত হিসেবে তার পরিধেয় বস্ত্র রেখে অন্য কাপড় পরিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।
এ ছাড়াও ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার প্রধান আসামি জাকির হোসেন জহিরসহ চারজন ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
অথচ মেডিকেল বোর্ড ধর্ষণের কোনো আলামত পায়নি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডা. মো. খলিল উল্যা বলেন, মেডিকেল পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পারে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ওই নারী ধর্ষণের শিকার হননি।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে ধর্ষণের আলামত ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকে না। ওই গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন শুক্রবার গভীর রাতে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শনিবার বিকেলে। মেডিকেল বোর্ড তার শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ধর্ষণের নমুনা সংগ্রহ করেছেন রোববার দুপুরে। নমুনা সংগ্রহ করে তা নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল সরকারি মেডিকেল কলেজের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।
ডিবির ওসি আবুল খায়ের বলেন, ওই মেডিকেল রিপোর্ট তিনি এখনও হাতে পাননি। এতে ধর্ষণের আলামত পাওয়া না গেলেও সমস্যা নেই। গ্রেফতারকৃতদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে এরই মধ্যে ঢাকায় সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষায় প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।