বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে বিদেশে পাচার হয়েছে প্রায় ৫৯২ কোটি ডলার। এর মধ্য দিয়ে অর্থ পাচারকারী শীর্ষ ৩০ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে অর্থ পাচারের পরিমাণ কমে এসেছে। সে বছর (২০১৪) বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছিল ৮৯৭ কোটি ডলার।
উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচারসংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)। সর্বশেষ প্রতিবেদনটি তারা প্রকাশ করেছে গতকাল। তাতে বলা হয়েছে, অর্থ পাচারের অধিকাংশই হয়েছে আমদানি-রফতানিতে জালিয়াতির মাধ্যমে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৫৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ থেকে এ পরিমাণ অর্থ বাইরে যাওয়ার পাশাপাশি অবৈধভাবে বড় অংকের অর্থ এসেছেও। ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ২৮০ কোটি ডলার।
অর্থ পাচার প্রতিরোধে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, সারা বিশ্বেই অর্থ পাচারের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ট্রেড বিজনেস তথা আমদানি-রফতানিকে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই। আমদানি-রফতানি ব্যাংকের মাধ্যমে হয়, এজন্য আমরা অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যাংকারদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছি। ব্যাংকারদের দক্ষতা বাড়াতে এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। অর্থ পাচার প্রতিরোধে সরকারের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অন্যতম। তারাও এ বিষয়ে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করছি, অচিরেই আমরা এর সুফল পাব।
জিএফআইয়ের গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছিল ২০১৩ সালে, ৯৬৬ কোটি ডলার। ২০১৪ সালে এর পরিমাণ ছিল ৮৯৭ কোটি ডলার। আর ২০১৫ সালের তথ্য হিসাবে নিলে ১০ বছরে (২০০৬-১৫) দেশ থেকে অবৈধভাবে দেশের বাইরে চলে গেছে ৬ হাজার ৩১৫ কোটি ডলার।
ট্রেড মিসপ্রাইসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার বেশি হয় বলে জানান বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, রফতানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং ও আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এটা হচ্ছে। এনবিআরের এটি দেখার কথা। এগুলো ধরার জন্য এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানো উচিত। অবৈধ যখন বলা হয়, তখন অর্থ আসা ও যাওয়া, দুই ক্ষেত্রেই তা হতে পারে। আমাদের মতো দেশের ক্ষেত্রে যাচ্ছে বেশি, আসছে কম। অর্থ পাচারের পরিমাণ যা হয়েছে, তাতে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কথাই বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। এ প্রবণতা কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।