প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বইমেলা কেবল বই কেনা-বেচার জন্য নয়; বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। যতই আমরা যান্ত্রিক হই না কেন, বইয়ের চাহিদা কখনো শেষ হবে না।
শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার’ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগে যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, তখন এই মেলায় অনবরত ঘুরে বেড়াতাম। আর এখন অনেকটা বন্দি জীবন, এখন ইচ্ছা থাকলেও আসা যায় না। আর আসলেও অন্যের অসুবিধা হয়।… সত্যি কথাটা কি, মনটা পড়ে থাকে বইমেলায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন বইয়ের মলাট, বই শেলফে সাজিয়ে রাখা, বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে, আমরা সবসময় তা পেতে চাই। দুই মলাটের ভেতরে কাগুজে বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এ বইকে ডিজিটাল দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, অনলাইনে বই থাকলে তা বিশ্বের সবার কাছে দ্রুত পৌঁছে যায়। ডিজিটাল লাইব্রেরি হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। দেশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রভাষা আর ইতিহাস নিয়ে নতুন প্রজন্মকে জানাতে আরো বেশি বই প্রকাশ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৫২ এর ভাষা আন্দেলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন। এ মেলা এবং এ আন্দোলনের ইতিহাস আমাদের ধরে রাখতে হবে। তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে।
এবারের বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ, মিশরীয় লেখক-গবেষক মুহসেন আল আরিসি। বইমেলার উদ্বোধন ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া চারজনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
কবিতায় কবি কাজী রোজী, কথাসাহিত্যে মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামাল, প্রবন্ধ ও গবেষণায় বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের জন্য গবেষক-কলামনিস্ট আফসান চৌধুরী এবার এ পুরস্কার পেয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি আমলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সঙ্কলিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক এ অনুষ্ঠানে উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। মিশরীয় সাংবাদিক-গবেষক মুহসেন আল আরিসি তার লেখা ‘হাসিনা হাকাইক আসাতি’ বইটির একটি কপি এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
রামেন্দু মজুমদারের সঞ্চালনায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবুও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘বিজয়: বায়ান্ন থেকে একাত্তর (নবপর্যায়)’। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবি কণ্ঠে কবিতা পাঠ।পাশাপাশি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি।
প্রতি শুক্র ও শনিবার বইমেলায় শিশু প্রহর থাকবে। প্রতি বছরের মতো একুশে গ্রন্থমেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইয়ের দোকানগুলো। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে