দেহের সুস্থতায় আমলকী

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

আমলকীর স্বাদ যদিও টক এবং কষাটে কিন্তু সুস্থ শরীরের জন্য আমলকী খাওয়ার অভ্যেস করা দরকার। এর স্বাদ প্রথমে কষাটে লাগলেও খাওয়া শেষে মুখে মিষ্টি ভাব আসে। আমলকীর ভেষজ গুণ প্রচুর। আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকীতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। দামে সস্তা অথচ পুষ্টিগুণে ভরা ছোট আকারের এ ফলটিতে রয়েছে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

 আমলকী গাছের পাতা, ফল, বাকল এর সবই ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত আমলকী খান তাদের রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকছে।

universel cardiac hospital

 এছাড়াও রক্তের চিনির মাত্রাও কমাতে সাহায্য করে। আমলকীর গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধে এর নির্যাস ব্যবহার করা হয়। আমলকী গাছের কান্ড ও শিকড়ের ছাল থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। আরেকটি বিষয়, রঙ, শ্যাম্পু ও লেখার কালিও তৈরি করা যায় শুকনো আমলকী দিয়ে।

 প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকিতে রয়েছে ৪৪৫ মিলিগ্রাম এস্করবিক এসিড বা ভিটামিন। এছাড়াও রয়েছে নানাপ্রকার ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। একজন মানুষের দৈনিক ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। প্রতিদিন ২টি করে আমলকী খেলে এ পরিমাণ ভিটামিনের চাহিদা এমনিতেই পূরণ হয়ে যাবে। এবার জেনে নিন আমলকির কিছু ওষুধি গুণের কথা।

 ঘুমের সমস্যা দূর করে :

 যাদের রাতে ভালো ঘুম হয় না তাদের জন্য আমলকী এক মহৌষধ। কাঁচা বা শুকনো আমলকী ভালো করে পিষে কাঁচা দুধে একটু মাখনসহ মাথার তালুতে লাগালে ঘুম যে কখন এলো টেরই পাবেন না। চোখ ওঠা রোগে স্রেফ ২টি শুকনো আমলকী আধা কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। পরদিন সকালে পানিটা ছেঁকে দু’তিন ফোঁটা চোখে দেবেন।

 রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলে :

 আমলকী ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ। আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখে।

 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে :

 নিয়মিত আমলকী সেবনের ফলে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরল লেভেল কম রাখতে সাহায্য করে।

 হজমে সাহায্য করে :

 আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন। তাতে হজমশক্তি বাড়বে এবং খিদে বাড়াবে। আবার এক গ্লাস দুধ বা জলের মধ্যে আমলকি গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়েও দিনে দুবার খেতে পারেন। এই মিশ্রণটি অ্যাসিডিটির সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে। আমলকীতে সামান্য লবণ, লেবুর রস মাখিয়ে রোদে রাখুন। শুকিয়ে যাওয়ার পর খেতে পারেন। খাবারের সঙ্গে আমলকীর আচার খেতে পারেন। যা হজমে সাহায্য করবে। ভিন্ন মতে, পেট ফাঁপা কিংবা অম্ল হলে ৩/৪ গ্রাম শুকনো আমলকী এক গ্লাস পানিতে আগের দিন ভিজিয়ে পরদিন ভাত খাওয়ার সময় পান করলে উপকার পাওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে আমলকী ধাতব পাতে মেশানো যাবে না।

 লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়ায় :

 আমলকী আমাদের দেহে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়ায়। যে কারণে আমাদের দাঁত ও নখ ভালো থাকে।

 রক্তের কোলেস্টেরল-মাত্রা কমায় :

 আমলকী মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল-মাত্রা কমাতে পারে বলে প্রমাণ মিলেছে। ডায়াবেটিক ইঁদুরের উপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকীর রস রক্তের চিনির মাত্রা কমাতে পারে এবং লিভারের কর্মক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারে।

 চোখের সুস্থতা বাড়ায় :

 চোখের সুস্ততা বাড়াতে আমলকির জুস কুবই উপকারী। বিশেষ করে আমলকীর জুস দৃষ্টিশক্তি প্রখর রাখার জন্য বেশ উপকারি। ছানি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া এ্যাজমায়ও আমলকীর জুস বেশ উপকারি।

 চুলের যত্নে আমলকি :

 আমলকীতে রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যামিনো অ্যাসিড যা চুল পড়া কমানোর পাশাপাশি বাড়ায় চুলের বৃদ্ধি। খুশকি দূর করতেও এর জুড়ি নেই। এবার তবে জেনে নিন আমলকীর বিভিন্ন হেয়ার প্যাক তৈরি ও ব্যবহারের পদ্ধতি।

 ১. চুল পড়া কমাতে : আয়ুবের্দিক হেয়ার টনিক হিসবে আমলকীর জুড়ি নেই। অকালপক্কতা দূর করে নতুন চুল গজাতে এটি বেশ কার্যকর। এক্ষেত্রে আধা কাপ আমলকির পাউডারের সঙ্গে ১ কাপ পানি ও ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে একঘণ্টা রেখে দিন। তারপর চুল শ্যাম্পু করে দ্রবণটি দিয়ে ধুয়ে নিন। ৫ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে।

 ২. খুশকি দূর করতে : ১ টেবিল চামচ আমলা পাউডার, ১ টেবিল চামচ টক দই, ১০ ফোঁটা সরিষার তেল ও ১ চা চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে ব্রাশের সাহায্যে ভেজা চুলে লাগান। ৫ মিনিট ম্যাসাজ করে তার ৩০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চুল। কয়েকদিন ব্যবহারের পর দেখবেন খুশকি দূর হয়েছে।

 ৩. চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে : ১ টেবিল চামচ আমলকীর পাউডারের সঙ্গে ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার পেস্টটি ভেজা চুলে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল হয়ে ওঠবে ঝলমলে।

 উল্লেখিত বিষয়ে উপকার পাওয়ার পাশাপাশি অর্শ্ব, ডায়রিয়া, আমাশয়, রক্তস্বল্পতা, জন্ডিস ও ত্বক সমস্যার সমাধানেও আমলকির রয়েছে বিশেষ ক্ষমতা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে