ভেনেজুয়েলা প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষে রাস্তায় নেমেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও। শনিবার রাজধানী কারাকাসের রাজপথ অচল হয়ে পড়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশে।
নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ডাকতে মাদুরোকে পশ্চিমা দেশগুলোর বেঁধে দেওয়া সময় (আলটিমেটাম) শেষ হওয়ার একদিন আগে দু’পক্ষ শনিবার রাজপথে নামে। বিক্ষোভকারীদের নেতা ও স্বঘোষিত ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট’ হুয়ান গুয়াইদো তার সমর্থকদের সমাবেশে বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবেন নেতাকর্মীরা। আর প্রেসিডেন্ট মাদুরোও সব ধরনের দাবি ও আলটিমেটাম উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, তিনিই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট।
তবে এর পরই আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।
ওই দিন শনিবার রাজধানী কারাকাসে প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের প্রথম প্রেসিডেন্ট হওয়ার ২০তম বর্ষপূর্তির এক সমাবেশে মাদুরো এ প্রস্তাব দেন।
গত বছরের মে মাসে ভেনিজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হন মাদুরো। এ মাসের শুরুতে শপথ নেন বামপন্থি এ রাজনীতিক। তবে বিরোধীরা প্রথম থেকেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে পুনর্ভোটের দাবি জানিয়ে আসছে।
সম্প্রতি দেশটির অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা দেখা দিলে রাস্তায় নামে বিরোধীরা। এরপর জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট গুয়াইদো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্ব দিতে থাকেন। তারপর তিনি নিজেকে ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট’ বলেও ঘোষণা দিয়ে বসেন।
এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্রদের তরফ থেকে গুয়াইদোকে ‘স্বীকৃতি’ দিয়ে মাদুরো সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
পশ্চিমা শক্তিগুলোর বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার একদিন আগে শনিবারের সমাবেশে গুয়াইদো বলেন, ‘মুক্তি’ না আসা পর্যন্ত আমাদের বিক্ষোভ চলবে। এসময় গুয়াইদোর সমর্থকেরা মাদুরোবিরোধী স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলেন।
বিরোধীদের এই বিক্ষোভ শুরুর আগে ভেনেজুয়েলার বিমান বাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং বিভাগের প্রধান জেনারেল ফ্রান্সিসকো ইয়ানেস এক ভিডিওবার্তায় গুয়াইদোর প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে অন্য সামরিক কর্মকর্তাদেরও তার পক্ষ নেওয়ার আহ্বান জানান।
যদিও এর জবাবে বিমান বাহিনীর হাইকমান্ড বলেছে, জেনারেল ইয়ানেস ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন জেনারেল ইয়ানেসের পদাঙ্ক অনুসরণ করতেই ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে মাদুরোর পূর্বসুরী সমাজবাদী নেতা প্রয়াত হুগো চাভেজের ক্ষমতার শীর্ষপদে বসার ২০ বছর বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার আয়োজিত ক্ষমতাসীন দলের সমাবেশে প্রেসিডেন্ট বলেন, পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম সরকারপক্ষের সমাবেশকে ‘অদৃশ্য’ রেখে বিরোধীদের আন্দোলনকে বড় করে দেখাতে চাইছে।
তার পক্ষেই সামরিক বাহিনী রয়েছে জানিয়ে মাদুরো বলেন, আমিই গোটা ভেনেজুয়েলার সার্বভৌম প্রেসিডেন্ট। আর সামরিক বাহিনী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি আনুগত্যশীল। তাই বিরোধীদের বলবো, ক্ষমতা দখলের ব্যর্থ চেষ্টা ছেড়ে দিতে। যুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টা ছাড়ুন!
আন্দোলনকারীরা আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চাইলেও মাদুরো বলেন, আপনারা নির্বাচন চাইছেন? আগাম নির্বাচন চাইছেন? ঠিক আছে, আমরা সংসদ নির্বাচন করতে চলেছি। ভেনেজুয়েলায় কোনো স্বৈরতন্ত্র ছিল না এবং থাকবেও না।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন শিগগির আহ্বান করে মাদুরো বিরোধীদের আন্দোলনকেই ভণ্ডুল করে দিতে চাইছেন। যদিও রোববার পশ্চিমা শক্তিগুলোর আলটিমেটাম শেষ হয়ে গেলে পরিস্থিতি অনেকখানিই স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ছয় বছর ধরে শাসন করা প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর শাসনে গুইদো চ্যালেঞ্জ জানায়। আর এতে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ হলো তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা। এ পদক্ষেপের পর বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া।
ভেনিজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুইদোকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন জানিয়েছে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ আরও কয়েকটি দেশ তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়া, চীন, মেক্সিকো, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ মাদুরো সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
মাদুরো ও তার পূর্বসূরি প্রয়াত হুগো শ্যাভেজ ছিলেন ইসরাইলের কঠোর সমালোচক। ২০০৯ সালে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন শ্যাভেজ।