অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিনে নতুন বই এসেছে ১৪১টি

সংস্কৃতি ডেস্ক

আজ সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন। গ্রন্থমেলা চলে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। আজ মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪১টি।

বিকেল ৪:০০টা  গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. নূহ-উল-আলম লেনিন।

universel cardiac hospital

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তোফায়েল আহমেদ এমপি।

স্বাগত বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আজকের আলোচনা অনুষ্ঠানটি ঐতিহাসিক তাৎপর্যের দাবি রাখে কারণ ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ এ অনুষ্ঠানে জাতির পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে অভিষিক্ত করার বিষয়ে বক্তব্য রাখতে উপস্থিত হয়েছেন।

প্রাবন্ধিক বলেন, ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে, ১৯৬৯-এ ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে তোফায়েল আহমেদ যখন শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপধিতে ভূষিত করার ঘোষণা দেন তখন মঞ্চে উপস্থিত ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) ছাত্র ইউনিয়ন  মেনন) ও ডাকসুসহ সকল ছাত্র নেতৃবৃন্দ রেসকোর্সের লক্ষ জনতার সাথে দু-হাত তুলে এই ঘোষণার প্রতি সমর্থন জানান। বস্তুত, সর্বসম্মতিক্রমেই শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কেউ কেউ কিছু না জেনেই ভিত্তিহীন মতদ্বৈধতার প্রশ্ন তুলতে চান, কেউ আবার ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি আগেই চয়ন ও ব্যবহারের কীর্তি দাবি করেন- যার কোনো ঐতিহাসিক মূল্য নেই। আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের ৫০ বছর পূর্তি এবং শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধ’ু উপাধিতে ভূষিত করার ৫০ বছর পূর্তিতে আমাদের মনে রাখতে হবে- এ দুটি ঘটনাই ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি এবং বাঙালি জাতির সম্মিলিত ইচ্ছার মহত্তম প্রকাশ।

আলোচকবৃন্দ বলেন, ১৯৬৯ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় সময়ের নাম। স্বাধীনতার প্রস্তুতিপর্ব বলা চলে ইতিহাসের এই সময়খ-কে। ছাত্রজনতার দাবি কীভাবে গোটা দেশের, সমগ্র জাতির জনদাবিতে পরিণত হয় তার উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল সে সময়। ৬৯-এরই ২৩ ফেব্রুয়ারি কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষে ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ যখন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধ’ু উপাধিত ভূষিত করেন তখন মূলত তিনি স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীকরূপে পরিগণিত হন। এবছর এ উপাধি অর্জনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ইতিহাসের দায় পূরণ করেছে। 

সভাপতির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৬৯-এ সমগ্র বাঙালি জাতি স্বাধীনতার অগ্নি-আকাক্সক্ষায় উজ্জীবিত হয়েছিল। সংগ্রামী ছাত্রজনতার সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছিল কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের মুক্তির দাবি। উপনেবিশের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন সার্বভৌম বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল আসাদ, মতিয়ুর, সাজর্ন্টে জহুরুল হক, শামসুজ্জোহা প্রমুখের রক্তে। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে গতিবেগ দিয়েছে মিথ্যা মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তির দাবি। অবশেষে ছাত্রজনতার গণসংর্বধনায় ১৯৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদানের মাধ্যমে যেন আসন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক হিসেবে যেন জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়। জাতির সে প্রত্যাশা তিনি পূরণ করেছেন। বাংলার বন্ধু হয়ে বাংলার মানুষের জন্য হাজার বছরের প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন মাকিদ হায়দার এবং ইকবাল আজিজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাহমুদা আখতার। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াকুব আলী খান, লীনা তাপসী খান এবং ক্যামেলিয়া সিদ্দিকা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন স্বরূপ হোসেন (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশী), রবিনস্ চৌধুরী (কী-বোর্ড), ফিরোজ খান (সেতার)। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের সাহিত্যকর্ম বিষয়ে আলাপনে অংশ নেন জাকির তালুকদার, নাসিমা আনিস, বিধান রিবেরু, তিথি আফরোজ এবং গিরিশ গৈরিক।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সায়েরা হাবীব।

আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি :

আগামীকাল ৫ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলার পঞ্চম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩:০০টা থেকে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।

বিকেল ৪:০০টা গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে কবি সিকান্দার আবু জাফর : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি নাসির আহমেদ।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান, ড. শিরীণ আখতার এবং কবি বায়তুল্লাহ কাদেরী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে