আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ। ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে পুলিশের এ সেবা সপ্তাহ।
পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বর্ণাঢ্য বার্ষিক প্যারেডের মধ্যদিয়ে এই সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারা দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ১১টি কন্টিনজেন্ট এবং পতাকাবাহী দলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এবারের পুলিশ সপ্তাহে প্যারেড অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন পুলিশ সদর দফতরের এআইজি আবিদা সুলতানা। তার নেতৃত্বে পরিচালিত প্যারেডে অংশ নিচ্ছেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য।
এ পুলিশ সপ্তাহের (২০১৯) মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে— ‘পুলিশ জনতা ঐক্য গড়ি, মাদক-জঙ্গি নির্মূল করি’। পুলিশ সপ্তাহে বিগত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়।
এ উপলক্ষে গত বছর (২০১৮) পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ৪০ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ৬২ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ১০৪ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ১৪৩ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ দেওয়া হবে। ইন্সপেক্টর প্রয়াত মো. জালাল উদ্দিন পিপিএম এবং কনস্টবল প্রয়াত মো. শামীম মিয়া এ দুজনকে বিপিএম মরণোত্তর পদক দেওয়া হয়েছে। তাদের পদক পরিবারের সদস্যরা গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী পদকপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)- এর স্টল পরিদর্শন এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেডে অংশগ্রহণ করবেন।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা বিধানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ‘শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রগতি’ মন্ত্রে দীক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জঙ্গিবাদ দমন ও মাদক নির্মূলে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে উল্লেখ করেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশের দক্ষতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের সব প্রয়োজন ও সংকটকালে বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সাফল্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীগণের সম্মেলন, আইজি ব্যাজ, শিল্ড প্যারেড, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে পুরস্কার বিতরণ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের পুনর্মিলনী, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইজিপির সম্মেলন এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভার মধ্যদিয়ে পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন শেষ হবে।