দেশকে আলোকিত করবে নতুন প্রযুক্তি নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোই

বিশেষ প্রতিনিধি

অদূর ভবিষ্যতে আইসোটেক পরিচালিত বরগুনার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পটুয়াখালীর পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ কয়লা কিংবা এলএনজি ভিত্তিক নতুন নির্মাণাধীন ও নির্মিতব্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোই প্রধানতঃ দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাবে।
জ্বালানি হিসেবে কয়লার পাশাপাশি লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস-এলএনজি ভিত্তিক সামিট ও জেনারেল ইলেক্ট্রিক কনসোর্টিয়াম, ভারতের রিলায়েন্স এবং ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সরকার ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এ কেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতা ১ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বন্ধ হতে যাওয়া এ বিদ্যুতকেন্দ্র্রগুলোর সিংহভাগই গ্যাসভিত্তিক। সক্ষমতা হ্রাস এবং উৎপাদন খরচ অপেক্ষাকৃত বেড়ে যাওয়ায় এ বছর থেকেই শুরু করে ধাপে ধাপে ২০৩০ সাল নাগাদ এগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আইসোটেকের মতো নতুন প্রযুক্তি নির্ভর, পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোই দেশকে আলোকিত করবে, সচল রাখবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ তথ্যসূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি পর্যালোচনা এবং পরিকল্পনার খসড়ায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ২০২১ সাল নাগাদ মোট ১ হাজার ৯৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার পুরনো প্রায় ২০টি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করে দেবে। ২০৩০ সাল নাগাদ ৫ হাজার ৭৪০ মেগাওয়াট স্থাপিত সক্ষমতার আরো অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে মানস¤পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলতি বছরেই উৎপাদনে আসবে। আগামী বছর থেকে ধীরে ধীরে বড় কেন্দ্রগুলো উৎপাদন শুরু করবে। আইসোটেক পরিচালিত নির্মিয়মান বরগুনার তালতলীর তাপ বিদ্যুতকেন্দ্রটি ২০২২ সালে উৎপাদনে যাবে। এগুলো থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিদ্যুৎ আসবে।
আইসোটেকের মিডিয়া অ্যাডভাইজার ফিরোজ চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশের বিদ্যুৎ খাতকে পূর্ণতা দিতে বরগুনার তালতলী উপজেলায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে দেশীয় সংস্থা আইসোটেক নির্মাণ করছে ৩০৭ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক এ প্রকল্প থেকে ২০২২ সাল নাগাদ খুব অল্প মূল্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে এখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ। ২৫ বছর এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পরিবেশের ক্ষতি না করে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহ নিশ্চিত করেছে।
প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরীফ হোসাইন জানিয়েছেন, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির সময়ে, স¤পন্ন হবার পরে, উৎপাদনের সময়ে যেন পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে মূল পরিকল্পনায় নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি সরলীকরণ করে জানিয়েছেন, কয়লা পরিবহনে কয়লার গুড়ো, বালুসহ সলিড ডাস্ট ব্যবস্থাপনার জন্য প্রকল্প এলাকার সকল রাস্তাঘাটা কংক্রিটের তৈরি হবে। ইলেকট্রো স্ট্যাটিক প্রিসিপিটেটর (ইএসপি) পদ্ধতিতে ডাস্ট সংগ্রহে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও কর্মপদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। চিমনি দিয়ে যে ধোঁয়া ও ময়লা নির্গত হবে তা হবে সহনীয় মাত্রায় ও সালফার মুক্ত। বিশ্বব্যাংক এর সুপারিশ মোতাবেক আইএফসি ইএইচএস মানদন্ডে ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন সিস্টেম নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লারগুলো এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে তাতে সর্বনি¤œ পর্যায়ে নাইট্রোজেন অক্সাইড সমূহ পুড়বে। চিমনিগুলো আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সর্বোচ্চ উচ্চতার করা হবে এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিত্যক্ত পানিকে ট্রিটমেন্ট করে তা কেন্দ্রের বাইরে সরানো হবে। নদীও সাগরের নোনা পানিকে বিশুদ্ধ ও মিষ্টকরণ প্লান্ট স্থাপন করা হবে। দূষন হ্রাসকরণ প্রক্রিয়াকে চলমান রাখার জন্য নিয়মিত মনিটরিং সেল সচল থাকবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টেংরাগিরি বনাঞ্চল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে মোট ১শ’ ৭০ একরের এ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে। নিশানবাড়ীয়া এলাকার বঙ্গোপসাগর ও পায়রা নদীর মোহনা থেকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শে বিশেষ মানসম্মত বালু উত্তোলন করে প্রকল্পের জমি ভরাটের কাজ চলছে।
বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি আইসোটেক ইলেট্রিফিকেশন কো¤পানি লিমিটেডকে লিজ দেয়া হয়েছে। পাউবো’র জমিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য পাউবো’র পক্ষ থেকে আইনী অনুরোধ করা হয়েছে।
আইসোটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঈনুল আলম জানান, সরকারী বরাদ্দ ও অনুমোদন সাপেক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো’র যে জায়গায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত ১৩৯ পরিবারের মধ্যে ১২১ পরিবারকে পুনর্বাসন কল্পে আন্তজার্তিক নিয়ম-রীতি মেনে ইতোমধ্যে অর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সহায়তার অর্থে তারা নিজ পরিবারের নামে জমি কিনে বাড়ি তৈরি শুরু করেছে। বাকী ১৮টি পরিবারের অনত্র পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। খুব শীঘ্রই শতভাগ পুনর্বাসন সম্পন্ন হবে বলে আইসোটেক কর্তৃপক্ষ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সন্তোষ প্রকাশ করেছে। পরবর্তীতে এ পরিবারগুলোর সদস্যদের প্রশিক্ষিত করে কর্মসংস্থানও দেয়া হবে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে স্বাগত জানিয়ে তালতলী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ এমএ জব্বার জানিয়েছেন, পুনর্বাসনের জন্য আশাতীত আর্থিক সহায়তা পেয়ে পরিবারগুলো ভালোমানের বাড়ি তৈরি করতে পারছে। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তালতলীসহ উপকূলীয় এলাকা উন্নয়নের শহরে পরিণত হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলে দেশের বিদ্যুৎ সংকট দূর করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
বরগুনা ১ আসনের সাংসদ অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বর্তমান সরকারের উন্নয়নের একটি অংশ। দেশের উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

শেয়ার করুন

universel cardiac hospital

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে