পাকিস্তানের ভরসা এখন চীন, সৌদি আরব : দারিউস শাহতামাসেবি

universel cardiac hospital

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের উপর ভরসা ছেড়ে পাকিস্তান এখন সেনা ও নৌ শক্তির জন্য শক্ত পা বাড়িয়েছে চীনের দিকে। সব পক্ষের থেকে অর্থ গ্রহণ করলেও চীনের  সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ইসলামাবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সক্রিয়তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে এমন অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসন নিরাপত্তা সহায়তার ৩০০ বিলিয়ন ডলার বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানকে অন্য কয়েকটি বিশেষ দেশ থেকে অস্ত্র কিনতে উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঝুঁকি নিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে চীন পাকিস্তানের সবচে’ বড় বন্ধু হয়ে উঠেছে। এটা প্রায় নিশ্চিত যে সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন চীন পাকিস্তানের নৌ শক্তি দ্রুত বিস্তারে সহায়তা দিচ্ছে। সাংহাইতে তৈরি হচ্ছে চারটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ যেগুলো পাকিস্তানকে সরবরাহ করা হবে। দ্য ডিপ্লোম্যাট জানিয়েছে , চীনের নির্মিত নৌযানগুলো  ২০২১ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ৩৪৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিতব্য এই ফ্রিগেডগুলো  হবে এন্টি-শিপ, এন্টি-সাবমেরিন অপারেশন চালাতে সক্ষম। এগুলো আকাশ প্রতিরক্ষায়ও পারদর্শী।

কয়েকটি রিপোর্টে আগাম জানিয়েছে, এই ফ্রিগেডগুলো গাদার বন্দরের আশেপাশে নিরাপত্তা কাজে প্রহরায় থাকবে। কয়েকটি গণমাধ্যম অভিযোগ করে বলেছে, চীন প্রকারান্তরে এই বন্দরটি ছিনতাই করে নিজেদের ঘাটিতে রূপান্তর করতে যাচ্ছে।  সম্ভবত গণমাধ্যম এই রিপোর্টের মধ্য দিয়ে এটাই বোঝাতে চেয়েছে যে চিন এই  কৌশলগত অঞ্চলে নৌ-উপস্থিতি ঘটাতে চাচ্ছে। ব্যাপার যাই হোক, যে কোনো অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এটা হবে খুবই মাথাব্যথার কারন। কিছু বিশেষজ্ঞ  ধারণা করছেন, এর ফলে চীন-পাকিস্তানের একটা নিয়মিত টহল শুরু হবে  গোটা  অঞ্চলে। 

বলা হয়ে থাকে, ঠিক এই বন্দরেই সৌদি আরব ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে একটি তেল রিফাইনারি তৈরি করার পরিকল্পনা করছে।  সৌদি জ্বালানি মন্ত্রণালয় সেটা জানিয়েছে। তারমানে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক কোরিডোরে সৌদি আরবকেও অংশীদার হিসাবে গ্রহণ করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটনের জন্য এটা দুর্ভাগ্য যে পাকিস্তানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি কমতে শুরু করেছে। স্টকহোম ইন্টরন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের প্রকাশিত ড্যাটায় দেখা যায় যে গত সাত বছর আগের ১ বিলিয়ন ডলারের বিশাল অস্ত্র রপ্তানী ২০১৭ সালে নেমে এসেছে ২১ মিলিয়ন ডলারে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর ১১ তারিখে আক্রমণের পর থেকে সব মিলিয়ে পাকিস্তানকে ২২ বিলিয়ন ডলার নিরাপত্তা সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আরো ১০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে অর্থনৈতিক সাহায্য। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কনসাল্টিং ফার্ম অ্যাভাসেন্ট এ তথ্য দিয়েছে। একই রিপোর্ট বলেছে,  এতকিছর পরও যুক্তরাষ্ট্রকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে পাকিস্তান প্রতিরক্ষার ব্যাপারে ক্রমেই চিনের মুখাপেক্ষি হয়ে পড়ছে। যুদ্ধ বিমান, সাবমেরিন এবং যুদ্ধজাহাজ কিনতে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী এক দশকে বেইজিং হয়ে উঠবে পাকিস্তানে এককভাবে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। কিন্তু সেই সঙ্গে রাশিয়া ও তুর্কি থেকে অস্ত্র আমদানীর একটি অপশনও রাখবে পাকিস্তান। তুরস্কের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের আগোস্টা ৯০বি ধরণের সাবমেরিন আপগ্রেড করে দিচ্ছে। এ ছাড়া তুরস্ক চারটি রণতরী পাকিস্তানের নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে। ইতিমধ্যে  তুরস্ক ২০১৬ সালে একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কারের বহর পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান হল চিনের এফ-৭ পিজি বিমানের সবচেয়ে বড় আমদানীকারক। ইতিমধ্যে পাকিস্তান ৫০ টি এই যুদ্ধবিমান কিনেছে। সম্প্রতি এর একটি পাকিস্তারে পশ্চিমাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট নিহত হয়েছেন।

প্রকৃত অর্থে পাকিস্তান এবং চীন বিভিন্নভাবে নিজেদের সম্পর্ক নিবিড় করে তুলছে। নৌ বাহিনীকে উন্নত করতে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করা এক কথা। কিন্তু যখন ুদটি দেশ নানা ক্ষেত্রে সম্পর্ক তৈরি করে, বিশেষ করে দু দেশের জনতা সম্পৃক্ত হয় তখন অন্য ব্যাপার। এই সপ্তাহেই পাকিস্তানের সরকার দুই দেশের মধ্যে নতুন ভিসা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তানের পর্যটন খাতে চিন ইতিমধ্যে বড় রকমের বিনীয়োগ করেছে। লাখ লাখ পাকিস্তানী যুবক এখন ইংরেজির আগে চাইনিজ ম্যান্ডারিন ভাষা শিখছে চাকরি এবং উচ্চ ডিগ্রির জন্য। আমরা যদি সামনের দিকে তাকাই, আমি বাজি রেখে বলতে পারি কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তান থেকে পশ্চিমা প্রভাব পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যাবে।

আরটিতে প্রকাশিত বিশ্লেষণ ইষৎ সক্ষিপ্ত মত ও পথে

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে