দুদকের ব্যাখ্যা : যেভাবে ফেঁসেছিলেন জাহালম

ডেস্ক রিপোর্ট

ফাইল ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৫ বছর আগে সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের জাহালমের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে । এসব মামলায় ৩ বছর জেল খাটার পর বেরিয়ে কারামুক্ত হন নির্দোষ জাহালম।

দুদক আজ মঙ্গলবার জাহালম ইস্যুতে গণমাধ্যমে একটি ব্যাখা পাঠিয়েছে।

দুদকের ব্যাখায় বলা হয়, ৩৩টি ব্যাংকের শাখা থেকে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় প্রতারক চক্রের সদস্য আবু ছালেক, নুরে আলম, মঈনুল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হয়।  ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তারা মোট ৩৩টি ব্যাংকের শাখা থেকে এ বিপুল অংকের টাকা আত্মসাত করেন।

অনুসন্ধানের সময় দুদক এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সংগ্রহ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদনের আলোকে ‍দুদক ২০১২ সালে বিভিন্ন থানায় ৩৩টি মামলা রুজু করেন।

এরপর মামলার তদন্ত শেষে কমিশনের অনুমোদনক্রমে ২০১৪-২০১৫ সালে এসব মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করে দুদক। এরমধ্যে ২৬টি মামলায় জাহে আলমকেই আবু সালেক হিসেবে চার্জশিটভুক্ত করা হয়।

যেভাবে জাহালামের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়:

দুদক জানায়, অনুসন্ধানকালে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা জাহালমকেই আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করেন। এছাড়া স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যগণও ছবি দেখেই তাকে সনাক্ত করেন।

এছাড়া সোনালী ব্যাংক লিঃ, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট শাখা, ঢাকার মোঃ আবু ছালেক এর ব্যাংক একাউন্ট নং ০০১০২০৯৭৪  খোলার সময় মোবাইল নং ০১৯২৯৩৩৪৭১৬ ও ০১৭৪৯ ৬৮৫০৫১ দেওয়া হয়।

আবার একই ছবি ব্যবহার করে ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই শাখায় মেহেরুন ছামাদ ট্রেডার্স প্রোঃ গোলাম মোর্ত্তজার নামে ০১৭৪৯ ৬৮৫০৫১ মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে আরো একটি দেওয়া ব্যাংক হিসাব খোলা হয়।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চেয়ারম্যান, বিটিআরসি বরাবর চিঠি দেয় দুদক। বিটিআরসি জানায় ০১৭৪৯ ৬৮৫০৫১ মোবাইল নম্বরটি মোঃ আবু সালেক নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এনআইডি নাম্বার ৯৪১৯ ৪২৫২ ৪৫৮১৫ এবং জন্ম তারিখ ১/৫/১৯৮৩, পিতা: মো: আব্দুল ছালাম, ঠিকানা: গুনিপাড়া, সলিমাবাদ, নাগরপুর, টাঙ্গাইল বলে উল্লেখ রয়েছে।

দুদক আরো জানায়, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদনে আবু সালেহ ও জাহালম যে ভিন্ন ব্যক্তি এ  বিষয়টি উঠে আসে।

প্রতিবেদনটি দুদকের দৃষ্টিতে আসলে মামলাগুলি অধিকতর তদন্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সাথে জাহালমের মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে দুদকের অধিকতর তদন্তেও বেরিয়ে আসে আবু সালেহ ও জাহালম এক নয়। দুজনেই ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মূল প্রতারক মোঃ আবু ছালেককে আসামী করে দুদক আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে। একই সঙ্গে অধিকতর তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় মোঃ জাহালমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন প্রত্যাহারের জন্য আদালতে চিঠি দেয় দুদক।

দুদক জানায়, অধিকতর তদন্তকালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মোঃ আবু ছালেক এনআইডি নম্বর: ১৯৮৩৯৪১৯৪২১২৪২৮১৫ এর যাবতীয় তথ্য সঠিক। তবে মো: আবু ছালেক নামীয় সোনালী ব্যাংক লি:, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট শাখায় যে হিসাব খোলা হয়েছে তাতে জাতীয় পরিচয়পত্রের কয়েকটি ডিজিট পরিবর্তন করে আইডি নং- ৯৪১৯ ৪২৫২ ৪৫৮১৫ দেওয়া হয়। পরিবর্তন করা হয় পিতা-মাতার নাম ও ঠিকানা।

এ বিষয়ে কমিশনের বক্তব্য হচ্ছে কমিশন আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের যে কোনো আদেশ, নির্দেশ এবং দিক-নির্দেশন সবসময় শিরোধার্য হিসেবে মেনে নেয়। কমিশন ইতোমধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব নিরুপণে জেলা জজ পদমর্যাদার একজন পরিচালকের নেতৃত্বে এক সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন এই প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দায়-দায়িত্ব কখনো বহন করে না। কমিশনের প্রতিটি কার্যক্রম আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে