কর্মব্যস্ত যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তি কেবল বড়দের নয়, প্রভাবিত করে ছোটদেরও। তারাও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইট, অ্যাপ ব্যবহার করছে।
সারা দিনের ব্যস্ততার মাঝে সন্তানের সব গতিবিধি, কম্পিউটার বা মোবাইলের প্রতি নজর দিতে পারেন না অনেক অভিভাবকই। আজকের যুগে সন্তানকে প্রযুক্তি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর সেটা সম্ভবও না। এমনিতেই বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর পর শারীরিক নানা পরিবর্তনের সঙ্গে মানসিক পরিবর্তন হয় তাদের। আর তখনই পর্নোগ্রাফির নেশার শিকার হতে পারে তারা। কখনও নিছক কৌতূহলের বশে আবার কখনও অজান্তেই এ নেশার শিকার হচ্ছে তারা।
আজকাল ইন্টারনেটেরর সহজলভ্যতায় শিশু-কিশোররা সহজেই পৌঁছে যেতে পারছে পর্ন সাইটে। এই নেশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ক্রমশ শিকার হচ্ছে তারা। কেউ বা সরাসরি অংশ নিচ্ছে চাইল্ড পর্নোগ্রাফিতে। আপনার সন্তানও এমন কোনও অভ্যাসের শিকার হয়ে পড়েনি তো?
সন্তানকে পর্নোগ্রাফির নেশা থেকে দূরে রাখতে অনুসরণ করা যায় কিছু কৌশল:
১. সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখুন। অভিভাবকদের মধ্যে অন্তত একজন সন্তানের সঙ্গে এতটাই সহজ হয়ে মিশুন, যাতে বাইরে থেকে কিছু শুনে এলে বা বন্ধুদের থেকে কিছু জানলে সে তা আপনাদের সহজেই জানায়।
২. পর্নোগ্রাফি কী, এই নেশা কি ক্ষতি করতে পারে, কেনো পর্নোগ্রাফিতে শিশুদের অংশ নেয়া সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ এসব কথা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনোর পরই তাকে গল্পের ছলে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
৩. আপনার আড়ালে সে এমন কোনও নেশার কবলে পড়েছে কি না, তা জানা খুব জরুরি। তাই সন্তান যে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে, তার দিকে খেয়াল রাখা অভিভাবক হিসাবে আপনার দায়িত্ব। আজকাল বেশ কিছু মোবাইল সেট ও অ্যাপের প্রি-ইনস্টল ফিল্টার থাকে। এর মাধ্যমে নজরদারি চালানো যায় মোবাইলে।
৪. ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন সকলেই জানেন। সন্তান আলাদা কোনও পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখতে চাইলে সচেতন হোন। তার ব্যক্তিগত বোধকে সম্মান দেখাতে গিয়ে অনেক সময় আমরা তাদেরই ক্ষতি করে ফেলি। মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহারের সময়ও যাতে খুব গোপনীয়তা অবলম্বন করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
নজরদারি চালান, তবে তাকে অবিশ্বাস করছেন তা বুঝতে দেবেন না।
৫. সন্তানের সঙ্গী, বন্ধু ও যাদের সঙ্গে মিশছে তাদের সবাইকে কমবেশি চিনে রাখুন। কাউকে বিপদজনক মনে হলে তার সম্পর্কে সচেতন করুন সন্তানকে। প্রয়োজনে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ান।
৭. সন্তানের মুখে হঠাৎই কোনও খারাপ শব্দ শুনলে তা সে কোথা থেকে শিখল তা জানতে চান।
৮. নিজেরাও সন্তানের সামনে পর্ন ছবি বা ভিডিও নিয়ে আগ্রহ দেখানো বা আলোচনা থেকে দূরে থাকুন।
শাসন নয়, বন্ধু হয়ে সন্তানকে এই নেশা থেকে দূরে রাখুন। সন্তান এই নেশার কবলে পড়েছে বুঝতে পারলে আর দেরি করবেন না। দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সূত্র: আনন্দবাজার