রংপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে অপরিকল্পিতভাবে তিস্তা নদী খননের অভিযোগ উঠেছে। চরের বিক্ষুব্ধ মানুষ নদীভাঙন রোধে ভেড়িবাঁধ নির্মাাণের দাবি জানিয়েছেন।
নদীরক্ষায় বাঁধ নির্মাণ না হলে আগামী বর্ষায় যোগযোগের রাস্তা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে তিস্তার মূল চ্যানেলে পানিপ্রবাহের জন্য খনন কাজ করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নদীপাড়ের মানুষকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে বিনবিনার চর থেকে মহিপুর শেখ হাসিনা সেতু পর্যন্ত পানিপ্রবাহের জন্য ২৪’শ মিটার ও নোহালী ইউনিয়নের কচুয়া এলাকায় ১৬’শ মিটার নদী খননের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এ খনন কাজ করছে চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স।
গঙ্গচাড়ার চর শংকরদহে তিস্তা নদী খনন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গেল বছর বন্যায় তৈরি হওয়া নদীর নতুন চ্যানেল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে খননের কাজ শুরু হয়েছে। ৭টি বড় বড় শ্যালোর মাধ্যমে করা হচ্ছে খননের কাজ।
বিনবিনার চর এলাকা থেকে ২৪’শ মিটার চরের মাটি খনন করে নদীতে পানিপ্রবাহের জন্য নতুন চ্যানেল তৈরি করা হচ্ছে। এ চ্যানেল দিয়ে মূল নদীর সাথে পানিপ্রবাহের সংযোগ দেয়া হবে। খনন করা বালু পাইপের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে খনন এলাকা থেকে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে। নদী খনন কাজ শুরু হওয়াতে নদীপাড়ের মানুষ খুশি হলেও অপরিকল্পিতভাবে নদী খননে তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তাদের অভিযোগ, খনন এলাকার কাছেই বালু ফেলার কারণে ওই বালু গিয়ে আবার খনন করা খালটি ভরাট হয়ে যাবে। কোনো কাজে আসবে না পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ খনন কাজ।
লহ্মীটারী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক (৬০) জানান, যে নদী খননের কাজ হচ্ছে এটি কোন কাজে আসবে না। এবার নদীতে বাঁধ না দিলে শংকরদহ এক ও তিন নম্বর ওয়ার্ড নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
একই এলাকার মমিনুর রহমান (৫৬), মাহাতাব আলী (৬৫), জয়নাল মিয়া (৫৫) বলেন, গত ২ বছর ধরে নদী ভাঙনে ফসলি জমি, বাড়িভিটা নদীতে চলে গেছে। নদীর পাড়ের উপরে বাড়ি করে আছি। নদীতে বাঁধ হলে শংকরদহ ও জয়রাম ওঝা চরের মানুষ নদী ভাঙন থেকে বাঁচতে পারত।
লহ্মীটারী ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মোন্নাফ বলেন, ২৪’শ মিটার দৈর্ঘ্যের যে নদী খননটা হচ্ছে তার প্রস্থ মাত্র ১৩০ ফুট। খনন করা বালু অপরিকল্পিতভাবে ৩০০ ফুট দূরে ফেলা হচ্ছে। চৈত্র কিংবা বৈশাখ মাসের বাতাসে খনন বালু ওই জায়গায় উড়ে গিয়ে ভরাট হয়ে যাবে। এতে করে সরকার যে অর্থ দিয়ে খনন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে চাচ্ছে সেটি করা সম্ভব হবে না। বিনবিনা চর এলাকায় তিস্তার যে নতুন চ্যানেল তৈরি হয়েছে সেটির কারণে গেল বর্ষায় শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধনের আগে লালমনিরহাট সড়কের একটি ব্জরি ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। এবার যদি বাঁধ দেয়া না হয় তবে বন্যায় ব্রিজসহ যোগাযোগের রাস্তা থাকবে না।
লহ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল হাদী বলেন, ১৩০ ফিট প্রস্থ ও ২৪’শ মিটার দৈর্ঘ্য এটি নদী খনন নয়, এটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। বিনবিনা চর এলাকা থেকে শেখ হাসিনা সেতু পর্যন্ত একটি বাঁধ দিলে এখানকার ৩০ হাজার পরিবার বাঁচতে পারবে নদী ভাঙন থেকে। আমরা চাই পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীতে বাঁধ দিয়ে কিংবা বালুর বস্তা ফেলে এখানকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বসতভিটা, ফসলি জমি বাঁচাতে কাজ করবে। এছাড়া খননের নামে অর্থ লোপাট করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে সরেজমিন তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, ২০১৬ ও ২০১৭ সালের বন্যায় তিস্তা নদীর নতুন চ্যানেল তৈরি হওয়ায় ভিন্নপথে পানিপ্রবাহের কারণে শংকরদহ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রংপুর থেকে লালমনিরহাট যোগাযোগের জন্য শংকরদহে এলজিইডি’র একটি ব্জরি গেল বন্যায় ভাঙনের উপক্রম হয়েছিল। ওই এলাকাকে ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিনবিনা চর এলাকা থেকে ২৪’শ মিটার খনন কাজ শুরু করেছে। খননের বালুগুলো নদীর দিকে নিচু এলাকায় ফেলা হচ্ছে। নতুন চ্যানেল তৈরি করে নদীর পানি মূল তিস্তা নদীতে দেয়া হবে। খননের সময় খালের প্রস্থ কম হলেও পানিপ্রবাহ শুরু হলে নিজে নিজেই এর আকার বড় হয়ে যাবে বলে আশা করছি।