আমার প্রথম প্রকাশিত বই : দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম

সমুদ্রের ব্যাকরণ আমার প্রথম প্রকাশিত বই। এবং এটা কবিতার। কোন নির্দিষ্ট প্রেক্ষিতে সব লেখা নয়, এবং সব কবিতার উপজীব্য এক নয়। সঙ্গতকারণেই বলা যেতে পারে এটা বিভিন্ন চিন্তা, বিভিন্ন মেজাজের কবিতার একটা সংকলন। এখানে আমার যাবতীয় লেখালেখির একটা সময়কাল আঁকা রইলো। এবং এ অঙ্কিত সময়কাল আমার ব্যক্তিগত চিন্তার ফসল, যেখানে ব্যক্তি আমি’র প্রতিচ্ছবি যেমন আছে, তেমনই আমি চেয়েছি আমার চারপাশ, সমাজ সংস্কৃতির কিছু আবহ আঁকতে।

এই চিন্তা চেতনাকে আঁকার যে খেলা, তাতে আমি কিভাবে জড়ালাম এ বিষয় নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। আমি বেঁড়ে উঠেছি তিতাসপাড়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। গ্রামের নাম শিলাউর। এ গ্রামটি অবশ্য গর্বিত এ কারণে যে বাঙলা কবিতার অবশ্য স্বীকার্য নাম সুফিয়া কামালের পৈতৃক নিবাস এ গ্রামে। আর আমাদের শৈশব কৈশোরে পাঠ্যবইতে যখন সুফিয়া কামাল পড়েছি, আমাদের কবি কে না দেখার একটা দুঃখ তো থেকেই যেত। দেখতাম, একজন কবির কাছে মানুষের বিস্তর প্রত্যাশা। কিন্তু কবি যে নির্মোহ জীবনে একার সন্ন্যাসী, এটা সাধারণ মানুষের বুঝার সুযোগ ছিলো না। তবুও কবি শব্দটি যে আলাদা কিছু, কবি যে সবার মধ্যে থেকেও আলাদা এরকম এক উপলব্ধির ভেতর আমাদের বয়স বেঁড়েছে। কিন্তু কবিত্ব আর কবিতার প্রতি সম্মোহন হবার কোন চর্চা আমাদের ছিলো না।

universel cardiac hospital

সমুদ্রের ব্যাকরণ, দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম

হাই ইশকুলের টিচার্স রুমের পাশে দেখতাম দেয়াল লিখন। প্রতি বছর একুশে এর কিছুটা পরিবর্তন হয়। শিক্ষকরা, সিনিয়ররা লিখে এই মনোরম দেয়ালপত্রিকা সাজাতো, কিন্তু এসব আমাকে বা আমাদের কাউকে টানেনি। আমরা পাঠের বইয়ের বাইরে তখন গল্প পড়তে চেয়েছি, সিনেমার পত্রিকা লুকিয়ে পড়তে চেয়েছি। এর ভেতরই আমাদের কাছে কোনোভাবে পৌঁছেছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কেউ কথা রাখেনি। কবিতার প্রতি ভালোলাগার সেই শুরু। কিন্তু লেখালেখি! কবিতা যে আমি বা আমরাও লিখতে পারি চিন্তায়ও আসেনি, কেউ হয়তো সেই পিচ্ছি বয়সেই উপন্যাস লিখার স্বপ্ন দেখছে।

এভাবেই যাচ্ছিল, স্কুল থেকে কলেজ। একদিন আকস্মিক হাতে আসে রাধিকা নগরীর দিকে হেঁটে যাই নামক এক বই। যার হাতে দেখি তার বন্ধুর বই। তখন সুনীল পেরিয়ে আরও কবিতা পড়ি। রবীঠাকুরের শেষের কবিতা পড়তে গিয়ে সবচেয়ে ভালোলাগে হে বন্ধু বিদায়। এরপর আকাশসংশয়, সিনিয়র কিন্তু স্নেহ বন্ধুত্বে যিনি আপন হয়ে ওঠেন তানজিম আল ইসলাম। আকাশসংশয় তে তিনি লিখেন বৃষ্টির জন্মরহস্য। আর বন্ধু আড্ডার সঞ্জয় দা ভাজপত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ান সারাশহরময়। দেখতে কি মনোরম। উল্টাই, কবিতা আরও টানে। আমার উৎসাহে সলতে দেয়া যা বুঝায় আর কি!

পাঠ হচ্ছিল। কিন্তু লেখা! যদি না একদিন মফস্বল শহরের এক দৈনিক কর্তৃক কলেজ ইস্যু করার প্রস্তাবনায় নিজেকেও যোগ দেবার বাতিক পেয়ে বসতো। সেই শুরু। এরপর বাঙলা ব্লগ, দিনরাত্রির আড্ডায় আমার নিতান্ত অংশগ্রহণের অবলম্বন এই এক আধটু কবিতা মতো লিখা। একটা অনলাইন রেডিও তাতেই ডেকে বসলো আমার কবিতা শুনতে, মোতালেব প্লাজায় অফিস। ভীরুকন্ঠে সেইসব কাঁচা লিখা পড়তে পড়তে আমি বোধহয় বুঝতে পারছিলাম এই কবিতা আমাকে পেয়ে বসবে। তারপর আকাশলীনা নামক একটি ছোট্ট সাহিত্যপত্র আমার বসন্তের কবিতা ব্লগ থেকে চেয়ে নেয়, কবিতাপ্রকাশের এক আধটু উপায় বের হয়ে আসছিল আমার। এই যে আশকারা, এই যে প্রকাশের পথ এসব পেরিয়ে আমার এই গ্রন্থের দিকে যাওয়া, যার নাম সমুদ্রের ব্যাকরণ। সমুদ্রের নিবিড় তরঙ্গে আমিও মিশে যেতে চাইলাম।

দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম, তরুণ কবি

সমুদ্রের ব্যাকরণ প্রচ্ছদঃ নির্ঝর নৈঃশব্দ্য প্রকাশনাঃ বোধি প্রকাশালয় (তক্ষশীলার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান) বইমেলা স্টল নংঃ ৪৭৭ পরিবেশকঃ তক্ষশীলা, জনান্তিক, আজিজ মার্কেট মূল্যঃ ১৭০ টাকা

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে