ব্যাংককের ফল বিক্রেতা ভিরাচাই রুপসুওয়ানাকুল বাজার যতবার এয়ার পিওরিফায়ার (বায়ু পরিশোধক যন্ত্র) কিনতে গেছেন। বিক্রেতারা বারবার একই কথা বলছেন, স্টক ফুরিয়ে গেছে। ধুলা থেকে বাঁচতে ভিরাচাইকে এখন মুখে মাস্ক পরতে হচ্ছে। ভিরাচাই জানান, বাতাস এতটা খারাপ হবে, তা আমরা কল্পনাও করিনি। দোকানে এবং অনলাইনে কোথাও আমরা পিওরিফায়ার পাচ্ছি না।
মৌসুমি বায়ুদূষণে জর্জরিত থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। দুই বছর ধরে অবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে শহরটি। নগরের বাসিন্দাদের প্রচুর পরিমাণে এয়ার ফিল্টার ও মাস্ক কিনতে হচ্ছে। ব্যাপক চাহিদার কারণে ফিল্টার ও মাস্কের সরবরাহে ঘাটতি দেয়া দিয়েছে। বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, দূষিত বায়ুর বিরুদ্ধে তাদের লম্বা সময় ধরেই লড়াই করতে হবে।
বায়ুদূষণ বৃদ্ধির কারণে পিওরিফায়ার নির্মাতা শার্প করপোরেশন অথবা মাস্ক প্রস্তুতকারী থ্রিএম করপোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এক কোটি মানুষের শহর ব্যাংককে বড় ধরনের বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। থাইল্যান্ডের কনগ্লোমারেট সেন্ট্রাল গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়োল ফোকাসাব জানান, ‘আমাদের ওয়েবসাইট ও স্টোরগুলো দেখেই আপনারা বুঝতে পারছেন, আমাদের এয়ার পিওরিফায়ার বিক্রি শেষ হয়ে গেছে।’
ব্যাংককের অন্যান্য খুচরা বিক্রেতার মধ্যে বার্লি জাকার এবং হোম প্রডাক্ট সেন্টারও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। বার্লির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অশ্বিন তেচাজারেওনভিকুল জানান, তারা এখন মাস্কের নতুন সরবরাহকারীর সন্ধান করছে।
বায়ুর মানে পতনের কারণে গত সপ্তাহে শত শত বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ। স্টার্টআপ মনিটরিং প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার এয়ার ভিজ্যুয়ালের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শহরগুলোর মধ্যে নিকৃষ্ট ধোঁয়াশার দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকক।
থাইল্যান্ডের সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার দেশটির কারখানাসহ অন্যান্য শীর্ষ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। মূলত আবহাওয়ার ধরন, যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলাবালি এবং বর্জ্য ও খড়কুটো পোড়ানোকেই দেশটির বিষাক্ত ধোঁয়াশার জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
ফেডারেশন অব থাই ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক চায়ো ত্রাঙ্গাদিসাইকুল জানান, দূষণ কমানোর জন্য শিল্প-কারখানাগুলোকে চাপ প্রয়োগ করা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশগত উন্নয়নের প্রযুক্তি বাজারে নিয়ে আসবে, তাদের জন্য বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
ধোঁয়াশা নিয়ন্ত্রক পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ধোঁয়াশার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির ঝুঁকির মধ্যে আছে ব্যাংকক শহর। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভ্রমণকারী অবসরযাপনের জন্য ব্যাংককে আসেন। পর্যটন শিল্পের ওপরই শহরটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নির্ভরশীল। ধোঁয়াশার কারণে পর্যটকরা ব্যাংকক থেকে বিমুখ হয়ে পড়তে পারেন।
এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্পে ধোঁয়াশার প্রভাব পড়তে শুরু করেনি। তবে ব্যাংক অব থাইল্যান্ড গত সপ্তাহে জানায়, যদি এ সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকে, তবে পর্যটন শিল্পে বায়ুদূষণের প্রভাব পড়তে শুরু করবে।