নিজের সঙ্গে সাব্বিরের লড়াই

ক্রীড়া ডেস্ক

টানা এক মাস টি২০ ফরমেটে খেলেছেন ক্রিকেটাররা। আর এই ফরমেট খেলেই এবার আন্তর্জাতিক ওয়ানডে সিরিজে নামতে হবে। সেটিও আবার বিরূপ ও অচেনা পরিবেশের নিউজিল্যান্ডে গিয়ে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসর শেষ হওয়ার ঠিক পরপরই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হওয়ার কারণে এক সঙ্গে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা অনুশীলন করার সুযোগ পাননি। বুধবার মাত্র ৮ ক্রিকেটার গেছেন নিউজিল্যান্ডে বিপিএল শেষ না হওয়ার কারণে। তাই সেখানেও বেশিদিন পুরো ওয়ানডে দল অনুশীলনের সুযোগ পাবে না। তবে দলের ডানহাতি অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ মনে করছেন টি২০ ফরমেটে ম্যাচ খেলার যে অভিজ্ঞতা সেসব কাজে লাগবে কিউইদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। অপরদিকে এই সিরিজেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার ফিরেছেন মারকুটে ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। অযাচিত অতীতের ঘটনাগুলো ভুলে তিনি নিজেকে ফিরে পাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচকরা তার ওপর আস্থা রেখে দলে টানার প্রতিদান দিতে চান তিনি। কারণ এটিকে অনেক বড় সুযোগ বলেই দাবি করলেন সাব্বির। আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে সুপরিচিত সাব্বির।

জাতীয় দলের হয়ে দুইবার নিউজিল্যান্ড সফর করেছেন ২৭ বছর বয়সী সাব্বির। এর মধ্যে প্রথম গিয়েছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপে। সেবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলে ৭ নম্বরে নেমে মাত্র ২৩ বলে ৪০ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন। পরে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড গিয়ে ৩ ওয়ানডে খেলেন। প্রথম ওয়ানডেতে ৭ নম্বরে নেমে ১১ বলে ১৬, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩ নম্বরে নেমে ৪৯ বলে ৩৮ ও তৃতীয় ওয়ানডেতে ৩ নম্বরে নেমে ১৪ বলে ১৯ রান করেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের গড় ২৪.৫১ হলেও নিউজিল্যান্ডে ৪ ওয়ানডেতে ২৮.২৫ গড়ে ১১৩ রানৃ করেছেন তিনি। ২০১৬ সালের সফরেই ২ টেস্ট খেলেছেন। এর মধ্যে ওয়েলিংটনে হওয়া প্রথম টেস্টের উভয় ইনিংসে ৭ নম্বরে নেমে অর্ধশতক হাঁকান। তবে দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিং পজিশন ৫ ও ৬ নম্বরে নেমে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে ৩ টি২০ ম্যাচ খেলে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন সাব্বির। সব ম্যাচেই ৩ নম্বরে নেমে প্রথম টি২০তে ১৫ বলে ১৬, দ্বিতীয়টিতে ৩২ বলে ৪৮ ও তৃতীয়টিতে ১৬ বলে ১৮ রান করেছিলেন। সার্বিকভাবে তাই নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচিতি আর ভাল কয়েকটি ইনিংস খেলার সুবাদেই এবার হুট করে ওয়ানডে দলে সুযোগ করে নিয়েছেন। কারণ শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ৬ মাসের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ছিল তার, সেটি এক মাস আগেই উঠিয়ে নেয়া হয়। আর এবার বিপিএলে প্রথমদিকে কয়েকটি ম্যাচে টানা ব্যর্থ হওয়ার পর ৫১ বলে ৮৫ রানের বিধ্বংসী যে ইনিংস খেলেছেন সেটি নজর কেড়েছিল সবার। তাই সুযোগটা পেয়েছেন সাব্বির। এ বিষয়ে তিনি নিউজিল্যান্ড যাওয়ার আগে বলেন, ‘অবশ্যই এটা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ। হতে পারে আমার দ্বিতীয় সুযোগ। অবশ্যই প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা থাকবে। দেখা যাক কি হয়।’

এবার বিপিএলে নিজেকে বেশ ভালভাবেই মেলে ধরেছেন সাব্বির। শুরুর কয়েকটি ম্যাচে সুবিধা করতে না পারলেও ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করেন। বিশেষ করে ৫১ বলে ৮৫ রানের ঝড়ো ইনিংস তার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেয় অনেকখানি। এরপর অপরাজিত ৪৪, ৪৫ ও ৩২ রানের তিনটি ভাল ইনিংস খেলেছেন টানা তিন ম্যাচে। সবমিলিয়ে বিপিএলে ১২ ম্যাচ খেলে ২৫.০৯ গড়ে ২৭৬ রান করেছেন এবার। এবার জাতীয় দলের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণের চ্যালেঞ্জ। পুরনো সব বাজে অতীত মনেও করতে চাইছেন না। এ বিষয়ে সাব্বির বলেন, ‘চেষ্টা করব আগের সাব্বির রূপে ফিরে আসার জন্য। জবাব দেয়া বড় বিষয় না। আমি ভাল খেলার চেষ্টা করব। কোন পজিশন না। দল যখন যেটা চাইবে সেটা খেলার চেষ্টা করব। ওইসব নিয়ে চিন্তা করছি না। পাস্ট ইজ পাস্ট। ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করছি।’ আর সে জন্য নিউজিল্যান্ডে আগে খেলার যে অভিজ্ঞতা সেসব কাজে লাগাতে চান সাব্বির। তিনি বলেন, ‘এর আগে দুইবার গিয়েছি নিউজিল্যান্ডে, অভিজ্ঞতা আছে। আবহাওয়া কেমন ধারণা আছে। আশাকরি দ্রুত মানিয়ে নিতে পারব ও ভাল খেলার চেষ্টা করব।’ তবে মানিয়ে ওঠাটা বেশ চ্যালেঞ্জেরই হবে। কারণ তীব্র বাতাসের সঙ্গে এখন সেখানে ‘সামার’ চললেও তাপমাত্রা বাংলাদেশের শীতকালের মতো। উইকেটও বাউন্স, সুইং ও গতিময়। সেখানে বিশেষ করে পেসাররাই সফল হয়ে থাকেন। তাই নিজেদের সঙ্গেই চ্যালেঞ্জ দেখছেন অফস্পিনার মিরাজ। তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা বেশ কিছু আগে যাচ্ছি। আমরা অনুশীলন করতে পারব আশাকরি। আমরা নিউজিল্যান্ডে এর আগেও গিয়েছিলাম। কন্ডিশন সম্পর্কে একটু ধারণা আছে। উপমহাদেশে স্পিনাররা ভাল করে, এর বাইরে গেলে স্পিনারদের ওইরকম ভূমিকা থাকে না। এটা আমাদের নিজেদের সঙ্গে নিজেদের একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা স্পিনাররা যদি ভাল করতে পারি, নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে দল আরও বেশি সাহায্য পাবে।’ বিপিএলে টি২০ ফরমেটে টানা খেলার পর নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ওয়ানডে খেলার বিষয়ে মিরাজ বলেন, ‘আসলে প্রতিদিন যত খেলব তত আসলে অভিজ্ঞতা বাড়বে, তত মাথা খুলবে। টি২০ ফরমেট থেকে নিউজিল্যান্ড যাচ্ছি। টি২০তে কিভাবে রানরেট বাড়াতে হয়, ঝুঁকি নিতে হয়, এগুলো ওয়ানডে ফরমেটে আমাদের কাজে লাগবে।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে