দীর্ঘদিন অনাদায়ী বা তিন বছর ধরে খেলাপি থাকা ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে অর্থঋণ আদালতে মামলা ছাড়াই ২ লাখ টাকা পর্যন্ত যেকোনো অংকের ঋণ অবলোপন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে, যা এতদিন ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। মৃত ব্যক্তির নামে বা তার একক প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ থাকলে সেটিও মামলা ছাড়া অবলোপনের সুযোগ দেয়া হয়েছে নতুন নীতিমালায়। গতকাল এক পরিপত্রের মাধ্যমে এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নীতিমালায় ঋণ অবলোপন করার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সমপরিমাণ অর্থ প্রভিশন সংরক্ষণ, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি গ্রহণ, ঋণের আংশিক অবলোপন না করা, অবলোপন-পরবর্তী ঋণ আদায় ও অবলোপনকৃত ঋণের প্রতিবেদন তৈরিসংক্রান্ত বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক একেএম আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান বাস্তবতা, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা, আইনি কাঠামো যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ঋণ অবলোপন বিষয়ে নতুন এ নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। যেসব ঋণের বিপরীতে ব্যাংক বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বা বন্ধকি সম্পত্তি না থাকে অথবা ভবিষ্যতে এসব ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, সেসব ঋণ অবলোপন করতে পারবে ব্যাংকগুলো। মৃত ব্যক্তির নামে অথবা তার একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া ঋণ ‘অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩’ অনুযায়ী মামলাযোগ্য না হলে মামলা ছাড়াই অবলোপন করা যাবে। তবে একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির উপার্জনক্ষম উত্তরসূরি রয়েছে কিনা, তা বিবেচনায় নিতে হবে। এক্ষেত্রে ঋণ অবলোপনের অন্য সব নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
ঋণ অবলোপনের আগে ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে বন্ধকি সম্পত্তি (যদি থাকে) নিয়ম অনুসারে বিক্রি করতে হবে। এছাড়া ব্যাংকে নিশ্চয়তা প্রদানকারী ব্যক্তির কাছ থেকে পাওনা অর্থ আদায় করতে না পারলে ওই ঋণও অবলোপনের আওতায় আসবে। অবলোপনের জন্য নির্বাচিত ঋণ হিসাবের ক্ষেত্রে আগে আইনি ব্যবস্থা না হয়ে থাকলে অবশ্যই ‘অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩’ অনুযায়ী মামলা করতে হবে। তবে ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে মামলা করতে হলে মামলা খরচ ঋণের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তাই ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ মামলা ছাড়াই অবলোপন করা যাবে।
অবলোপনের আগে ঋণ থেকে রক্ষিত ‘স্থগিত সুদ’ বাদ দেয়ার পর অবশিষ্ট ঋণস্থিতির সমপরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষিত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে অবলোপনের জন্য নির্ধারিত ঋণ হিসাবের বিপরীতে সংরক্ষিত প্রভিশন পর্যাপ্ত না হলে ব্যাংকের চলতি বছরের আয় থেকে অবশিষ্ট প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। ঋণ অবলোপনের পরও ওই ঋণের ওপর ব্যাংকের দাবি বহাল থাকবে এবং আইনি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ ঋণ আদায়ের জন্য প্রত্যেক ব্যাংকে একটি পৃথক ইউনিট গঠনের পাশাপাশি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অবলোপনকৃত ঋণের প্রতিবেদনের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, অবলোপনকৃত ঋণ ব্যাংকগুলোকে একটি পৃথক লেজারে সংরক্ষণ করতে হবে। ঋণ অবলোপন করা হলেও আর্থিক প্রতিবেদনে ঋণগ্রহীতাকে ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। অবলোপনকৃত ঋণের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোয় (সিআইবি) যথারীতি রিপোর্ট করতে হবে। ঋণ অবলোপনসংক্রান্ত তথ্য বিআরপিডি সার্কুলার অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, অবলোপনকৃত ঋণ কখনই পুনর্গঠন করা যাবে না। শুধু এক্সিট প্ল্যানের আওতায় ঋণ অবলোপন হবে। ব্যাংকের পরিচালক বা সাবেক পরিচালকদের ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে পূর্বানুমোদন নিতে হবে।