গাজীপুরে ৩ যুবককে অপহরণ করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনায় ২ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গাজীপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।
এসপি বলেন, গত বুধবার বিকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় অপহরণের অভিযোগে কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসফিকুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর থানায় মামলা দায়ের করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় দুই পুলিশ সদস্য ছাড়াও অজ্ঞাত ৭জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অপরাধী যেই হোক তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত বুধবার বিকাল পাঁচটার দিকে রায়হান সরকার, লাবিব উদ্দিন, নওশাদ ইসলাম, তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান নামে পাঁচ যুবক ঢাকার বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেটকার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। তারা গাড়িতে গ্যাস ভরতে কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় শিলা-বৃষ্টি ফিলিং স্টেশনে যান। গ্যাস নেওয়ার সময় তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান গাড়ি থেকে নেমে পাশের দোকানে চা খেতে যান।
গ্যাস নিয়ে তাদের গাড়িটি ফিলিং স্টেশন থেকে একটু এগিয়ে যেতেই সাদা পোশাকে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসফিকুর রহমানসহ ৩-৪ জন লোক একটি হাইস মডেলের মাইক্রো নিয়ে ওই যুবকদের গাড়ি গতিরোধ করেন। গাড়ি থেকে রায়হান মিয়া, লাবিব উদ্দিন ও নওশাদ ইসলাম জোড়পূর্বক ধরে নিয়ে যান।
এ সময় চা খেতে যাওয়া দুই বন্ধু রক্ষা পান। পরে ওই তিন বন্ধুকে নিয়ে টঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দেওড়া নির্মানাধীন উড়ালসড়কের নীচে নিয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তারা। সেখানে গিয়ে তিন বন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।
পরে বেশ কিছু সময় তাদের সঙ্গে টাকা নিয়ে দেন-দরবার হয়। একপর্যায়ে ওই দুই এএসআই তাদেরকে জানায় ১০ লাখ টাকা দিলেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে।
এরই মধ্যে তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান মুঠোফোনে তাদের পরিবার ও কালিয়াকৈর থানা পুলিশকে অবহিত করে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কালিয়াকৈর থানার ওসি বিষয়টি মির্জাপুর থানা পুলিশকে অবহিত করে।
পরে দুই থানার সহযোগিতায় তাদেরকে ওইদিন রাত ৮ টার দিকে মির্জাপুর থানায় এবং পরে রাত ১২ টার দিকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার মুসফিকুর রহমানকে প্রত্যাহার করে নিজ নিজ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন মজুমদার গণমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়ায় দুই পুলিশ সদস্যের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ৭জনকে আসামি করে কালিয়াকৈর থানায় ভিকটিম রায়হান সরকার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
এ মামলায় কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অপর অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে।
এদিকে উদ্ধার হওয়া ৩ যুবকের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। তারা বলছেন, অপরহরণের পর ওই ২ পুলিশ সদস্য তাদের ক্রস ফায়ারের হুমকি দেন।
মামলার বাদী রায়হান সরকার জানান, তারা ৫ বন্ধু বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার সময় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরো অজ্ঞাত কয়েকজন তাদের ধরে নিয়ে যান। পরে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। না দিলে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যার হুমকিও দেয়া দেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এএসআই) মুসফিকুর রহমান একসময় গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশে একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় থেকে তাদের মধ্যে সখ্যতার সৃষ্টি হয়। ডিবিতে দায়িত্ব পালনের সময় তারা নিরীহ মানুষদের ধরে নিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছেন বলে অনেক অভিযোগ রয়েছে।