আজ শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার নবম দিন। গ্রন্থমেলা চলে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
মেলায় আজ নতুন বই এসেছে ২১৮টি। মেলায় ছিল আজ শিশুপ্রহর। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন :
আজ সকাল ১০টায় একাডেমি প্রাঙ্গনে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক-শাখায় ৮০, খ-শাখায় ১০৮ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ. এম. এম. মহিউজ্জামান চৌধুরী, ইয়াকুব আলী খান এবং ড. সাইম রানা।
শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন :
আজ ১০টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারণ জ্ঞানে ১৪৬ জন এবং উপস্থিত বক্তৃতায় ৪৩ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের সংগীত পরিচালক কাজী দেলোয়ার হোসেন, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী অনিমা মুক্তি গমেজ ও ড. আখতারুজ্জাহান।
বিকেল ৪টা গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আবদুল হক : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ আজিজুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অজয় দাশগুপ্ত, সোহরাব হাসান এবং আহমাদ মাযহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুব্রত বড়ুয়া।
প্রাবন্ধিক বলেন, একজন সার্থক মননশীল প্রাবন্ধিকের চিন্তনপ্রক্রিয়াকে অনিবার্যভাবে যেমন হতে হয় যুক্তিশৃঙ্খলিত তেমনি তার আবেগ-অনুভূতিকেও বাঁধতে হয় বুদ্ধির শাসনে। সাহিত্য ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে বিশ্লেষণে আগ্রহী একজন প্রাবন্ধিককে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হয় সাহিত্যের যাবতীয় গতি-প্রকৃতির পাশাপাশি তার দেশকালের সংকট ও তার উত্তরণমুখী সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনাকে। এভাবে তিনি একটি জাতির সামগ্রিক সুখ-দুঃখ, আনন্দ- বেদনার সঙ্গে একাত্ম হন, ব্যাপৃত হন আপন জাতিসত্তার স্বরূপ সন্ধানে। যিনি প্রকৃত মনীষী তিনি কালের কাঠামোর মধ্যে থেকেও হয়ে ওঠেন যুগন্ধর ও কালোত্তর প্রতিভার অধিকারী। ‘কলমসৈনিক’ হিসেবে খ্যাত আবদুল হক বাংলাদেশের সেরকমই শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদদের একজন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ঘটনারÑ ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে অগ্রণী, দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল চিন্তকের পরিচয় দিয়েছেন।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ- উভয় ক্ষেত্রেই আবদুল হক প্রদর্শন করেছেন বুদ্ধিজীবীতার দায়বোধের চূড়ান্ত আদর্শ। তাঁর চিন্তার স্বচ্ছতা, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে আছে এ বিষয়ক প্রবন্ধাবলি। তাঁর প্রবন্ধসমূহে সর্বদাই অভিব্যক্ত হয়েছে এদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে গভীরতর বিশ্লেষণমূলক অনুভাবনা। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ে আবদুল হকের সুগভীর চিন্তাভাবনাকে পাঠককুলের বোধের কাছে যত বেশি পৌঁছে দেওয়া যাবে সমাজ ও জাতির জন্য তত বেশি তা ইতিবাচক ও কল্যাণময় ফল বয়ে আনবে। আবদুল হকের বুদ্ধিবৃত্তিক সাধনার বিস্তার আমাদের একান্তভাবে কাম্য।
সভাপতির বক্তব্যে সুব্রত বড়ুয়া বলেন, আবদুল হক একজন সত্যসন্ধ বুদ্ধিজীবী। তাঁর নাট্যরচনা, অনুবাদ, দিনলিপি, প্রবন্ধ গবেষণা-সবকিছুর মধ্যেই বড় করে প্রতিভাত হয়েছে দেশপ্রেম, উদার মানবিকতা এবং নিরাপোষ মনোভাব। জন্মশতবর্ষে তাঁকে নিয়ে নতুন করে আলোচনার অবকাশ রয়েছে।
‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন মাহবুব সাদিক, মাহবুব আজিজ, মারুফ রায়হান, কুমার চক্রবর্তী এবং পাপড়ি রহমান।
কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি আতাহার খান এবং ফরিদ কবির। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন এবং অনন্যা লাবণী পুতুল।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল গোলাম কুদ্দুছের পরিচালনায় ‘বহ্নিশিখা’ এবং খাজা সালাহ উদ্দিনের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘ঘুংঘুর সাংস্কৃতিক একাডেমি’র পরিবেশনা।
আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি :
আগামীকাল ১০ ফেব্রুয়ারি রোববার অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪টা গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে কথাশিল্পী অমিয়ভূষণ মজুমদার : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মহিবুল আজিজ।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন হোসেনউদ্দীন হোসেন, মাহবুব সদিক এবং হরিশংকর জলদাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সেলিনা হোসেন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।