জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্ডাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপি কিশোরীদের ফুটবল খেলায় আগ্রহী করে তুলতেই এই উদ্যোগ তাদের।
বাংলাদেশের কোনো ফুটবলারকে নিয়ে এবারই প্রথম তথ্যচিত্র বানাতে যাচ্ছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফের প্রতিনিধি মানুয়েলা ডিসপয়েন্টস জানিয়েছেন, মারিয়ার সাফল্যের গল্প বিশ্বের সব কিশোদের কাছে পৌঁছে দিতে চান তারা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বিশ্বব্যাপি শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করে ইউনিসেফ। মারিয়া একটা মডেল। ওকে নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাকে দেখে শিশু-কিশোরীরা উদ্বুদ্ধ হবে। বিপথে না গিয়ে ফুটবলে আকৃষ্ট হবে। কীভাবে ফুটবলের মাধ্যমে দারিদ্রকে হার মানিয়েছে মারিয়া, সে গল্পটা আমরা বিশ্বের সব কিশোরীদের শোনাতে চাই।
২০১১ সালে বঙ্গমাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ দিয়ে ফুটবলে হাতেখড়ি মারিয়ার। ২০১৩ সালে ধোবাউড়ার বিখ্যাত কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু ফুটবল নিয়ে জীবন চলত না মারিয়ার। কলসিন্দুর থেকে যখন প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন তখন তাকে মায়ের সঙ্গে মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে হতো। কারণ বাবাহীন সংসারে উপার্জনের একমাত্র রাস্তা ছিল এটাই।
কষ্টের জীবন-যাপনের ভেতরেই ২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলে ডাক পান মারিয়া। তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে তার সহ-অধিনায়কত্বেই চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। মারিয়ার অধিনায়কত্বে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পায় আরও বড় সাফল্য। ভারতকে হারিয়ে জেতে অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ।
এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে দেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলের অন্যতম সেরা তারকা মারিয়া। এবার তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেতে যাচ্ছেন।
ইউনিসেফের উদ্যোগ নিয়ে উচ্ছ্বসিত মারিয়া বলেছেন, ওরা আমার জীবন কাহিনী শুনতে চেয়েছিল। তখন আমি তাদের বলেছি কীভাবে আমি ফুটবলে ওঠে এলাম। সারাদেশ ও সারাবিশ্ব জানতে পারবে আমার সাফল্যের গল্প।
২৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্যচিত্রটি প্রকাশিত হবে ইউনিসেফের ওয়েবসাইট ও সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি।
তিনি বলেন, ইউনিসেফ বাংলাদেশের নারী ফুটবলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মারিয়াকে এখন সারা দুনিয়ার মানুষ দেখবে।