টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আজ বৃহস্পতিবার জার্মানি সফরের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে এবং ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুযারি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের আমন্ত্রণে আগামী ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির মিউনিখ সফর করবেন। এরপর মিউনিথ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাবেন। সফর শেষে ২০ ফেব্রুয়ারি দেশে পৌছবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ দুটি সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে দু’দেশের মধ্যে বিনিয়োগ সংক্রান্ত দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রও সরকার প্রধানদের জন্য নির্ধারিত সেশনসহ অন্যান্য সেশনে রোহিঙ্গা ক্রাইসিস ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনার স্থান পাবে। এছাড়াও জলবায়ুসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অর্জন ও সাফল্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা যাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য দুবাই এক্সপোতে বাংলাদেশ বৃহত্তর পরিসরে অংশ নিবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুই দেশের বিরাজমান সম্পর্ককে আরো সম্প্রসারিত করাই প্রধানমন্ত্রীর সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, এই সফরে দেশটির সঙ্গে বিনিয়োগ সংক্রান্ত দুইটি সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ আহমেদ ডালমুখ আল মাখতুমের ব্যক্তিগত অফিসের সঙ্গে সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। বাকিটা হচ্ছে, মাতারবাড়িতে ৩০০ একরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ আহমেদ ডালমুখ আল মাখতুমের ব্যক্তিগত অফিসের সঙ্গে সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন জানান, এই সফরে ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক ডিফেন্স প্রদর্শনী পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশীদ আল-মাকতুমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স এবং আরব আমিরাতের ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার শেখ মুহাম্মদ বিন যায়েদ আল-নাহিয়ানের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে। এছাড়া আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ যায়েদ বিন সুলতানের স্ত্রী শাইখা ফাতিমার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এস এ সিকিউরিটি থ্রেড’ এবং ‘থেলথ সিকিউরিটি রাউন্ডটেবিল’ শীর্ষক দুইটি সেশনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের জন্য নির্ধারিত সেশনসহ অন্য সেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়েও আলোচনা করবেন।
জানা যায়, মিউনিখ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মেরকেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিবেন। জার্মানি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এবং একক দেশ হিসেবে জার্মানি সার্বিকভাবে বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম (যুক্তরাষ্ট্রের পরে) এবং ইউরোপে সর্ববৃহৎ রপ্তানি বাজার। মেরকেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করবেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও আলাপ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সফরে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান সিমেন্স এজি’র গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। সিমেন্স দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বড় বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এই সফরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবণা রয়েছে।