বাংলাদেশের অগ্রগতিতে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘের ৩টি রোমভিত্তিক সংস্থা এফএও, ডব্লিউএফপি এবং আইএফএডি এর প্রধানরা। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন তারা।
ইতালির রাজধানী রোমে সংগঠনগুলোর সদর দফতরে বুধবার সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠক অনিুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তারা বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয়ে তারা অভিনন্দন জানান। তারা গত দশকে বাংলাদেশের জিডিপিতে ৬ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়ায় এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মোকাবেলায় বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, বিশ্বে মানবতার এক দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি বাংলাদেশে তার সাম্প্রতিক সফরকে স্মরণ করেন এবং জোরপূর্বক বিচ্ছিন্ন মায়ানমার নাগরিকদের অমানবিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণের পক্ষে বাংলাদেশকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, সম্প্রতি ডব্লিউএফপি জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য সহায়তা ৫৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৯৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি করেছে।
ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের (এফএও) মহাপরিচালক জসি গ্রাজিয়ানো ড সিলভা অসাধারণ অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ৩২৬টি জাতীয় প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করছে এফএও।
তিনি জানান, বর্তমানে এফএও ৩৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্য ব্যবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে ৯৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশে কৃষিখাতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন স্থানান্তর করার জন্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার জন্য এফএওর প্রধানকে অনুরোধ করেন। তিনি এফএওকে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আনারস, লিচুর মতো উন্নত ফলের জন্য ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করার আহ্বান জানান।
১৯৭৪ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে অনুদান এবং কম সুদের ঋণ হিসাবে আইএফএডি ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করেছে যা প্রকল্পের প্রায় ৪৬৪ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করেন ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (আইএফএডি) সভাপতি জিলবার্ট এফ হাউংবো।
তিনি বলেন, অধিকন্তু ১১ দশমিক ১ মিলিয়ন পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ৩৩টি গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আইএফএডি ঋণ এবং অনুদান হিসাবে ৭১৭ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। গ্রামীণ জনগণের জন্য সম্পদের বিতরণ ও সদ্ব্যবহারে বাংলাদেশ চরম দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্রমাগত সহায়তার জন্য সংগঠনের প্রধানদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশে জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশকে এফএওর উল্লেখযোগ্য সহায়তা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের সহায়তার বিষয়টিও মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ অর্জন করেছে এবং গত দশকে এ অর্জন ছিল সবসময় ৬-এর ওপরে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।।
তিনি বলেন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ একটি প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এবং ইতোমধ্যে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশের স্থিতি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা-সম্বলিত এসডিজি মূলধারার দিকে অগ্রসর হয়েছে।
ভবিষ্যৎ যাত্রায় বাংলাদেশ ও এফএওর মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের জন্য এফএওর মিডিয়া সেন্টার অর্থমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।
অর্থমন্ত্রী ১৪-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক কৃষি ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (আইএফএডি) গভর্নিং কাউন্সিলের সভায় ৪২তম অধিবেশনে যোগ দিতে ইতালির রোম রয়েছেন।