টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে চলছে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা। এতে দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি যোগ দিয়েছেন। এবার এক পর্বের ইজতেমা হওয়ায় মুসল্লিদের বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা গেছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর একদিন আগে বৃহস্পতিবারই ইজতেমা মাঠ ভরে যায় কানায় কানায়। শুক্রবার মাঠ ছাড়িয়ে ইজতেমার মুসল্লিরা ছড়িয়ে পড়েছেন আশপাশের এলাকায়।
আজ শনিবার সকাল ১০টার পর ইজতেমার প্রথম আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
তাবলিগ জামাতের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে গত ১ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এবারের ইজতেমা অনেকটা অনিশ্চয়তায় পড়ে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে ইজতেমা হলেও এবার তা সম্ভব হয়নি। নতুন করে সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই পক্ষের মুরব্বিদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে এক পর্বে চার দিনে ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে দুই দিন করে নেতৃত্ব ভাগাভাগি করে দেয়া হয়।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম দুই দিন নেতৃত্ব দিচ্ছেন দিল্লির মাওলানা সাদ বিরোধী পক্ষ। আর মাওলানা সাদপন্থী পক্ষ রবি ও সোমবার ইজতেমা করবে।
শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা। তার বয়ান ভাষান্তর করেন বাংলাদেশের তাবলিগের প্রধান মুরব্বি মাওলানা জোবায়ের। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জোহাইরুল হাসান। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা দেলোয়ার হোসেন। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেউলা।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ। এতে ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের খতিব ও তাবলিগের শুরা সদস্য মাওলানা জোবায়ের। দুপুর ১টা ৪২ মিনিটে নামাজ শুরু হয়।
জুমার নামাজে অংশ নিতে শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোর মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জমায়েত হন। অনেকেই আবার বৃহস্পতিবার রাতেই ময়দানে এসে তাবলিগ জামাতের সাথীদের সঙ্গে খিত্তায় অবস্থান নেন। অনেকে ময়দানে জায়গা না পেয়ে পলিথিন, খবরের কাগজ, হোগলা পাতার পাটি বিছিয়ে কামারপাড়া সড়ক, বাটা সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে জুমার নামাজে শরিক হন।
ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াইএম বেলালুর রহমান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর প্রমুখ শরিক হন।
জুমার নামাজের পূর্বে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি পূর্বে যেভাবে সুন্দরভাবে ইজতেমা সম্পন্ন হয়েছে এবারও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
ইজতেমা মাঠে জুমার নামাজ আদায় করতে সকাল ৭টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে ময়দানে আসেন আক্তারুজ্জামান মোল্লা। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন। আল্লাহ যে কারো উসিলায় এ নামাজ কবুল করতে পারেন। তাই প্রতি বছরের মতো এবারেও বৃহৎ জুমার জামাতে অংশ নিতে এসেছি।
সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী :
বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াইএম বেলালুর রহমান।
তিনি বলেন, জুমার নামাজ উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। যানজট মুক্ত চলাচলের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ রাখা হয়েছে।
আজ শনিবার প্রথম দফা আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয়া মুসুল্লিরা ছাড়াও অসংখ্য মুসল্লি আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে এখানে আসেন। এর জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে টঙ্গী ব্রিজ, কামারপাড়া ব্রিজ, ভোগড়া বাইপাস, মীরেরবাজার এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে ইজতেমা সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ইজতেমা শেষে মুসল্লিদের যাওয়ার সময়ও একই ব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকবে। আমরা নাগরিকদের কাছে আশা করব তারা যেন সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখে। রাস্তায় যে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে তাদের সহযোগিতা করবে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা।