গর্ভাবস্থার দিনগুলোয় গর্ভবতীকে ভ্রূণের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ গর্ভের শিশুর জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে একবারে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়াও ঠিক নয়। অনেক কর্মজীবী নারীকে বিশেষ এ সময়টাতে অফিস করতে হয়। ফলে নিয়মিত অফিসের জন্য যাতায়াত করতে হয়। ভ্রমণের সময় কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা :
ডাক্তারি তথ্যমতে, গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাস এবং শেষ তিনমাস অত্যন্ত নাজুক সময়। তাই এ সময় দূরে কোথাও ভ্রমণের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে নিয়মিত যে চেকআপ রয়েছে সেগুলো করিয়ে নিন। চেকআপের রেজাল্ট দেখে চিকিৎসকরা যে পরামর্শ দেবেন তার ব্যবস্থা নিয়ে তবেই ভ্রমণে যাওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখা :
ভ্রমণকালীন প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। যে কয়দিন বাইরে থাকা হবে সে অনুযায়ী ওষুধের বাইরেও অতিরিক্ত ওষুধ সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। কেননা কিছু কিছু ওষুধ আছে যা সব জায়গায় পাওয়াও যায় না। সুতরাং প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো হাতের কাছে রাখা জরুরি।
হেলথ রিপোর্ট সঙ্গে রাখা :
ভ্রমণের সময় গর্ভবতীকে তার হেলথ রিপোর্টের কপি সঙ্গে রাখা উচিত। যাত্রাপথে কোনো জরুরি মুহূর্তে গর্ভবতীকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হলে সঙ্গে থাকা রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক দ্রুত চিকৎসা করতে পারবেন।
শুকনো খাবার সঙ্গে রাখা :
ভ্রমণের সময় বাইরের খাবার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। প্রয়োজনে ঘরে তৈরি খাবার সঙ্গে নিন। অথবা শুকনো খাবার সঙ্গে রাখতে পারেন। রাখুন বিশুদ্ধ পানিও।
যথাযথ পোশাক ও জুতা নির্বাচন করা :
গর্ভাবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ওঠানামা করে থাকে। তবে এ সময় একটু বেশি গরম অনুভূত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ সময় একটু ঢিলেঢালা হালকা পোশাক এবং আরামদায়ক স্লিপার পরা উচিত। উঁচু জুতা এ সময় ব্যবহার না করাই ভালো। বেছে নিতে পারেন পছন্দ অনুযায়ী আরামদায়ক ফেব্রিক্সের পোশাক।
মাঝেমধ্যে যাত্রা বিরতি :
ভ্রমণের সময় একাধারে অনেকটা পথ যেতে হলে তা গর্ভবতীর জন্য কষ্টদায়ক হয়ে পড়ে। পায়ে পানি আসা, অনেক সময় ধরে বসে থাকার কারণে পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরে। ফলে পা অসাড় হয়ে আসে। এ ছাড়া রক্ত চলাচল কমে যায়। তাই রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যাত্রা বিরতিতে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করে নিন।
যেসব ক্ষেত্রে গর্ভবতীর ভ্রমণ করা উচিত নয়—
চিকিৎসকরা সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ না করার জন্যই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে বিশেষ কারণে যদি যেতেই হয় সেক্ষেত্রে আদর্শ সময় হলো দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার। এ সময় মর্নিং সিকনেসের প্রবণতা হ্রাস পায়। এবং গর্ভপাতের ঝুঁকিও অনেকটা কমে আসে।
প্রথম ও শেষ ট্রাইমেস্টারে :
প্রেগন্যান্সির প্রথম তিনমাস এবং শেষের তিনমাস কোনো বাস বা দূরের জার্নি করা উচিত নয়। কারণ, প্রথম তিনমাস শিশু ভ্রূণ অবস্থায় থাকে এবং এ সময়টা ভ্রূণের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় ছোট্ট কোনো ভুল বড় সমস্যার রূপ নিতে পারে। শেষের ট্রাইমেস্টারে অতিরিক্ত ঝাঁকুনির ফলে সময়ের আগেই প্রসবযন্ত্রণা, পানি ভাঙা, প্রি-ম্যাচিউর কন্ট্রাকশন ইত্যাদি হতে পারে। তাই এ সময়গুলোতে পারতপক্ষে দূরের যাত্রা না করাই ভালো।
রক্তক্ষরণের ইতিহাস :
অনেক মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় হঠাৎ রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় কোনো নারীর গর্ভের ফুল বা পাসেন্টা যদি জরায়ুর একদম নিচের দিকে বা জরায়ুমুখে লেগে থাকে তাহলে অনেক সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। যেসব গর্ভবতী মহিলার আগে এ সমস্যা ছিল তাদের জন্য গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ করা কোনো মতেই উচিত নয়। কারণ এতে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস :
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই মায়ের ওজন শেষের দিকে বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় যদি গর্ভবতীর ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তবে ওজন আরো বেড়ে যায়। বাড়ে গর্ভশিশুর ওজনও। যেহেতু একটি ভারী শিশুকে মা বহন করছে তাই যে কোনো ধরনের ঝাঁকিতে পানি ভেঙে যেতে পারে। এবং প্রসবের আগে পানি ভাঙলে তা শিশুর জন্য হুমকিস্বরূপ এবং এ সময় ভ্রমণ করা একদমই নিরাপদ নয়।
অপরিণত শিশু জন্মদানের ইতিহাস থাকলে :
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলা আগে অপরিণত শিশুর জন্ম দিয়েছেন, সেসব মহিলা পরবর্তী সময়ে আবারো অপরিণত শিশু জন্ম দেওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাই এসব নারীর ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ বিপদজনক।
আগে গর্ভপাত হয়ে থাকলে :
চিকিৎসকের মত অনুযায়ী যেসব গর্ভবতী নারীর আগে গর্ভপাত হয়েছে মৃতসন্তান প্রসব করেছে তাদের গর্ভাবস্থায় ভ্রমণের জন্য নিষেধ করে থাকেন। কারণ এ ধরনের ইতিহাস থেকে থাকলে ভ্রমণের কারণে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
গর্ভে যখন যমজ সন্তান :
যমজ সন্তান ধারণ করছেন এমন মায়েদের গর্ভাবস্থায় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।