বুড়িগঙ্গার তীরে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান থমকে যাচ্ছে একটি জায়গায়। ৪৩টি মসজিদ তৈরি হয়েছে নদীর জায়গায়। তবে সেগুলোতে হাত দিলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে ভেবে সেগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে।
গত ১০ দিনের অভিযানে বুড়িগঙ্গা তীরে ভেঙে দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৬২০ অবৈধ স্থাপনা। এর মধ্যে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের বহুতল স্থাপনাও বাদ পড়েনি। ভেঙে দেওয়া হয়েছে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের শ্বশুরবাড়িও।
অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থা বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান মত ও পথকে জানান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কাউকেই উচ্ছেদের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা যে সকল স্থানে অভিযান পরিচালনা করছি সেখানে প্রায় ৪৩টি মসজিদ আছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আমরা উচ্ছেদ চালাচ্ছি না। জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয় থেকে মসজিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তবে এসব মসজিদও সরিয়ে নেওয়া হবে। আর কবে, কোথায় সরিয়ে নেয়া হবে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসবে বলেও জানান মোস্তাফিজুর।
বুড়িগঙ্গার পর এবার উচ্ছেদ শুরু হয়েছে তুরাগ নদীর অংশে। নদী দখল করে অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বিআইডাব্লিউটিএ। অব্যাহত উচ্ছেদ অভিযানের চতুর্থ পর্যায়ের প্রথম দিনে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় নদীর দুই তীরে।
অভিযানের দশম দিনে উচ্ছেদ করা করা হয়েছে ১২০ অবৈধ স্থাপনা। এর মধ্যে ৬২টি পাকা, ৩৩টি আধাপাকা ও ২৫টি টিনের ও টংঘর।
সোমবার সকাল থেকে বসিলার দক্ষিণমুড়া ও ওয়াসপুরের নদীর দুই তীরে উচ্ছেদ অভিযান চালায় সংস্থাটি। এসময় একটি চারতলা ভবন, আটটি তিনতলা, ১১টি দোতলা, ৪২টি একতলা ভবন উচ্ছেদ করা হয়।
বসিলার দক্ষিণমুড়ায় নদীর পাড়ে গড়ে তোলা পাকা ভবন ও বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)এর অনুমোদন নেয়া হয়নি। আবার নিয়ম অনুযায়ী নদীর তীর থেকে দেড়শ ফুট দূরত্বের মধ্যে কোনো পাকা স্থাপনা নির্মানের ক্ষেত্রে বিআইডাব্লিউটিএর অনুমোদনের প্রয়োজন পরবে। কথিত ভূমি মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সবাই অনুমোদন ছাড়াই স্থাপনা নির্মান করেছেন।
উচ্ছেদের কারণে কিছুটা বিপাকে পরেছেন দখলদারদের বাড়িতে ভাড়া থাকা ভাড়াটিয়ারা। তবে অধিকাংশ ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের আঁচ পেয়ে আগেই বাসা ছেড়েছেন।
গত তিন পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযানে ছাড় দেয়া হয়নি কোনো দখলদারদের। চতুর্থ পর্যায়ের অভিযানও সে অনুযায়ী চলবে বলে জানিয়েছেন বিআইডাব্লিটিএ।
এর আগে প্রথম দুই পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযানে এক হাজার ১৯৯টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিআইডাব্লিউটিএ। তৃতীয় পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করা হয় বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল কামরাঙ্গীরচর খালে। সেখানে উচ্ছেদ অভিযানে সম্পৃক্ত হয় ঢাকা জেলা প্রশাসক।
এরপর পুনরায় অভিযান চালানো হচ্ছে মূল নদীতে। প্রথম দিন পর্যায়ে নয়দিনের অভিযানে উচ্ছেদ করা হয়েছে দেড় হাজার অবৈধ স্থাপনা।
মঙ্গলবার চতুর্থ পর্যায়ের দ্বিতীয় দিনের অভিযান বসিলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডাব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন।