ফের বিতর্কে কেএম নূরুল হুদা ও মাহবুব তালুকদার

ডেস্ক রিপোর্ট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ও আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্থানীয় সরকারের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠানটির নির্বাচনে না আসার প্রেক্ষিতে সংসদ নির্বাচনের আগে নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে বেশ কয়েকবার কমিশন বৈঠক বর্জন করা ইসি মাহবুব তালুকদার নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন। তবে ওই একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসনে বসা সিইসি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হবে বলে জানান। এসময় তিনি সম্প্রতি শেষ হওয়া সংসদ নির্বাচনের মতোই উপজেলা পরিষদের এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলেও জানান।

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। এ সময় নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম ও রফিকুল ইসলাম, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

universel cardiac hospital

ব্রিফিংকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা এবারের উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগের নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও অংশগ্রহণমূলক হবে। সকল পক্ষের সমন্বয়ই পারে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে। উপজেলা নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।

বেলজিয়ামের নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ইউরোপের একটি দেশ বেলজিয়াম। সেখানে এক সময় ভোট দেয়ার হার কমে গিয়েছিল। কমে সেটা ২০ শতাংশের নিচে চলে যায়। তখন দেশটির সরকার আইন করে যে, ভোটাররা যদি ভোট না দেয়, তাহলে তাদেরকে জরিমানা করা হবে। কিন্তু ভোটাররা জরিমানা দেয়, তারপরও ভোট দেয় না।

সিইসি বলেন, বেলজিয়ামবাসী জরিমানা দিয়েও বলে যে ভোট দেয়ার দরকার নাই। সেটা একটা সংস্কৃতি। আর আমাদের দেশের সংস্কৃতি উল্টো। আমাদের নির্বাচনে ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে, অত্যন্ত উৎসবমুখর-আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য উপস্থিত থাকেন। তাই ভোটাররা যাতে তাদের ভোটাধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন, সে ব্যাপারে উপস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন সিইসি। সেই সঙ্গে তাদেরকে উপজেলা নির্বাচনের প্রয়োজনীয় আইন-কানুনও ভালোভাবে জেনে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এরআগে ব্রিফিং দেয়ার সময় আসন্ন উপজেলা নির্বাচন সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদল অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছে। এতে এই নির্বাচন জৌলুস হারাতে বসেছে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, নির্বাচনকে অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রহণযোগ্য হতে হবে।

মাহবুব তালুকদার বলেন, উপজেলা নির্বাচন সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, এই সত্যকে মেনে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। ধারণা করা যায়, চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রত্যেকেই নির্বাচিত হবেন এবং ওই পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না, এটাই বাস্তবতা। তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য শব্দ দুটির ঔজ্জ্বল্য থাকে না। তারপরও আনুষ্ঠানিকতার কারণেই নির্বাচন করে যেতে হয়। আমি মনে করি, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, নির্বাচনের মৌলিক কাঠামো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সর্তক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ের মতো স্থানীয় পর্যায়েও গণতন্ত্র একটি সুনির্দিষ্ট অবকাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বিশেষ কোনো আদেশ নির্দেশে যদি সেই অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ আজ্ঞাবহ হয়ে পড়েন। বর্তমানে উপজেলা পরিষদ যেভাবে দায়িত্ব পালন করার কথা তা সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা পরিষদ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী না হলে এর নির্বাচনও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই তো নির্বাচন।

নির্বাচন অবশ্যই আইনানুগ হতে হবে উল্লেখ করে ইসি মাহবুব তালুকদার বলেন, আইন ও শৃঙ্খলা এই দুটি শব্দের মধ্যেই নির্বাচনের মূল দর্শনটি নিহিত রয়েছে। নির্বাচন অবশ্যই আইনানুগ হতে হবে। আইনানুগ হওয়ার অর্থ সবার প্রতি সম আচরণ ও সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করা। উপজেলা নির্বাচনের ভোটারদের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হলে ও কার্যত ভোটারদের নিরাপত্তা বিধান করা না গেলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত হন না। নির্বাচনে ভোটারদের প্রাধান্য ও ভোটদানের স্বাভাবিকতার উপরই নির্বাচনের সাফল্য নির্ভরশীল।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে