এ বছরের শেষ দিকেই হচ্ছে বিএনপির সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলটিতে শুরু হয়েছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। আগামী দুই মাসের মধ্যেই অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পুনর্গঠন সম্পন্ন করা হবে। সহসাই পুনর্গঠন করা হচ্ছে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)। এরপর পর্যায়ক্রমে হাত দেয়া হবে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, তাঁতী দল, ওলামা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, মহিলা দল এবং সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে। ডাকসু নির্বাচন থাকায় ছাত্রদল পুনর্গঠন করা হচ্ছে সবার শেষে।
প্রক্রিয়ার শুরুতে ইতোমধ্যেই পুনর্গঠন করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দলটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাবকে আহ্বায়ক করে ১৫৪ সদস্যের কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে আব্দুর রহিমকে। গঠনতন্ত্রে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা না থাকা সত্তে¡ও এ মর্যাদা ভোগ করা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে আহ্বায়ক করে গত ১ ফেব্রুয়ারি এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগের রাতে (৩১ ডিসেম্বর) দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এ ছাড়া ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত এ কমিটিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে চিহ্নিত প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে আহ্বায়ক, ডা. ওবায়দুল কবির খানকে সদস্য সচিব করে ১৬১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির বিদেশবিষয়ক কমিটি (ফরেন অ্যাফেয়ার্স) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ২১ সদস্যের এই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। গত ১৭ জানুয়ারি তারেক রহমানের নির্দেশে বিদেশবিষয়ক এ কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। কমিটির আহ্বায়ক ইনাম আহমেদ চৌধুরী পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার কারণে এ কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। এর আগে এ কমিটির প্রধান ছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী ও প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান। শমসের মবিন চৌধুরী প্রথমে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন এবং পরে বিকল্পধারায় যোগ দেন। আর শফিক রেহমান বয়সের কারণে অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয়তাবাদী প্রকৌশলীদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) এবং কৃষিবিদদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব এগ্রিকালচারিস্টের (এ্যাব) নতুন কমিটির ঘোষণা আসছে। শিগগিরই জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। ২১ বছর আগের কমিটি দিয়েই চলছে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল।
নানা ঘাত-প্রতিঘাত, প্রতিক‚লতা, দমন-পীড়নে জর্জরিত দলটি রাজপথে ঘুর দাঁড়াতেই এ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে দলটির নেতারা দাবি করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি ও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে বিএনপি। ২৯৭টি আসনে প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছে মাত্র ৭টি আসনে। নির্বাচনে ভূমিধস পরাজয় দেখে স্তব্ধ দলটির নেতাকর্মীরা। এর জন্য সরকারি দলকে দায়ি করলেও এই ব্যর্থতার পেছনে সাংগঠনিক দূর্বলতাকেও এড়িয়ে যেতে চান না বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব।
এ জন্যই বিপর্যয় এড়িয়ে এবার দল গুছাতে মনোযোগ দিয়েছেন তারা। আগামী ২ মাসের মধ্যেই এসব কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চান নেতারা। এ জন্য জাতীয় স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা কাউন্সিল, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির কয়েক দফা বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপিতে যুক্ত হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নেতাদের পরামর্শ শুনেছেন এবং নিজের মতামতও দিয়েছেন।
এসব বৈঠকের ফলাফলের ভিত্তিতেই সবকিছু পেছনে ফেলে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রত্যয়ে’ সপ্তম জাতীয় কাউন্সিলের পতাকা উড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং জেলা-উপজেলা কমিটির পুনর্গঠন করে আগামী নভেম্বর বা ডিসেম্বরে কাউন্সিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
কাউন্সিল করার আগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে বিএনপিতে। আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্ত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে। যদি খালেদা জিয়া এ সময়ের মধ্যে কারামুক্ত না হন তাহলে তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলীয় কাউন্সিল পরিচালনা করবেন। তিনি স্কাইপিতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নীতিনির্ধারণী বক্তব্য দেবেন। কাউন্সিল অধিবেশনে খালেদা জিয়ার জন্য চেয়ারপারসনের চেয়ারটি শূন্য রাখা হবে। এ কাউন্সিলে দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ একজন নেতাকে মহাসচিবের দায়িত্বে আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটিতে এক ঝাঁক নতুন মুখকে দেখা যেতে পারে। যাদের অধিকাংশই তরুণ বলে আভাস পাওয়া গেছে। তবে নবীন ও প্রবীণদের মিলনমেলা হিসেবে স্থায়ী কমিটি ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে তারেক রহমানের। দলের গুরুত্বপূর্ণ ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিব পদেও তরুণ ও মেধাবীদের প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে এমন নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এবং ভোটের অধিকার আদায়ে বিএনপির ভ‚মিকা দেখতে চায় দেশের জনগণ। এ জন্য বিএনপিকে আরো শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। দলকে সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল হতে হবে। বিএনপি সে কাজে হাত দিয়েছে। আশা করি বিএনপি সফল হবে।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে মৎসজীবী দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য কমিটিগুলোও প্রক্রিয়াধীন। দ্রুত সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে বিগত দিনে যাদের ভূমিকা রয়েছে তারাই এতে স্থান পাবেন।
রাজনীতি