‘গায়েবি’ মামলা যাচাই-বাছাই হচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীসহ সারা দেশের থানাগুলোতে দায়েরকৃত ৪ সহস্রাধিক মামলা ও চার লক্ষাধিক আসামি নিয়ে শুরু থেকেই নানা প্রশ্ন ছিল। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এসব মামলাকে বরাবরই ‘গায়েবি’ বলে দাবি করে আসছে। অন্যদিকে বেশ কিছু মামলায় নিরীহ লোকজনকে হয়রানির অভিযোগও উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে তৎপর হয়ে উঠেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। কোনো ধরনের ভুয়া মামলা দায়ের হয়েছে কিনা এবং ওইসব মামলায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে আসামি করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশের আলোকে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে যাচাই-বাছাই কার্যক্রমও। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্ব^র থেকে নভেম্ব^র পর্যন্ত সারা দেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৪২৯টি। এসব মামলায় ১ লাখ ৯ হাজার ৪৪১ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি হিসেবে আদালতে চালান করা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৩৪ জনকে। জ্ঞাত ও অজ্ঞাত আসামির মোট সংখ্যা ৪ লাখ ৩৪ লাখ ৯৭৫ জন। যার অধিকাংশ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র ও চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার সময় হয়েছে। অভিযোগপত্র দাখিলের আগে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলাগুলো নিয়ে একাধিক বৈঠক করে অভিযোগ থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের রেহাই দিতে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিএনপির সাধারণ কর্মীদের নাম অভিযোগপত্রে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ঢাকা মহানগরীতে গত ৬ মাসে কোনো ভুয়া মামলা হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ ভুয়া মামলায় আসামি হয়ে থাকলে তাদের জামিনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।
তদন্ত ও মামলার ধরন সম্পর্কে ডিএমপির একজন কর্মকর্তা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশ বাদি হয়ে দায়ের করা মামলাগুলোর পৃথক তালিকা করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে যারা সত্যিকারভাবে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তাদের পাশাপাশি এসব ঘটনার নির্দেশদাতা ও অর্থদাতাদের আসামি রাখা হবে।
সূত্র মতে, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব মামলা সঠিকভাবে তদন্ত করার জন্য এরইমধ্যে সব মেট্রোপলিটন কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ অনুযায়ী দেশের থানাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তারা মামলার নথি নিয়ে কাজ শুরু করছেন। তারা রাজনৈতিক মামলা নিয়ে বেশ দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছেন।
সূত্র আরো জানায়, ওইসব মামলায় বিএনপি মহাসচিব থেকে শুরু করে প্রায় সব সিনিয়র নেতাকেই আসামি করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে নির্দেশ বা হুকুমদানের অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ একইরকম। এ অবস্থায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলার সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিএনপির দাবি এবং বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত তথ্যর সূত্র ধরেই পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এর অংশ হিসেবে মামলাগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে মামলা পুঁজি করে পুলিশ ‘গ্রেপ্তার বাণিজ্য’ করেছে কিনা তারও তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে