অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এ দেশে নতুন নয়। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এর আগেও পুরান ঢাকার নিমতলীতে আগুনের লেলিহান শিখায় ছাই হয়েছে অনেক জীবন। এবার গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮-এ, যা আরও বাড়তে পারে। আগুন লাগার কারণ নিয়ে নানা মত থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে যে সময়ক্ষেপন হয়েছে তা নিয়ে সবাই এক মত। এর মূল কারণ অপরিকল্পিত আবাসন।
প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে ৫ ঘণ্টার বেশি। সেখানে কোনো ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারেনি। এ কারণে যে সময়ক্ষেপণ হয়েছে। আর তাতেই যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে। যদিও কর্তৃপক্ষের বরাতে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বলা বাহুল্য, সব ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া গেলেও যে জীবন গত হয়েছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তা আর ফিরে আসবে না।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ধার অভিযান পরিচালনাসহ ক্ষতিগ্রস্তদেরদের সহায়তার আশ^াস দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। ব্যবসায়ীদের আপত্তির বিষয়টিকে দুঃখজনক অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি আশা করি, (চকবাজারে) এই ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার যে দাবি উঠেছে, তাতে আর কেউ আপত্তি করবেন না।’
আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলতে চাই, আর আপত্তির কোনো সুযোগ নেই, বরং এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সরকার ও সিটি করপোরেশনকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করা উচিত। মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে, ব্যবসায়ীদের নিজেদের স্বার্থেও এটা করা উচিত।
আমাদের নিশ্চয় মনে আছে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীর সেই ভয়াবহ অগ্নিকা-ের কথা। ঐ ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ১২৪ জন। সেই ঘটনার মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা মানবতাবোধ সম্পন্ন যে কোনো মানুষেরই মনে থাকার কথা।
তখন সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের টনক নড়লেও কি কারণে থেমে যায় কেমিক্যাল গোডাউন স্থানান্তরের কাজ তা তদন্ত করে দেখা দরকার। এ বিষয়ে সরকারের জোরালো তৎপরতার অভাব ছিল কি না, সেটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। তা না হলে এ রকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমরা মনে করি আর কালবিলম্ব না করে এ বিষয়ে দ্রুত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। কোন ঘটনার পর মুখে মুখে স্থানান্তরের কথা না বলে কোথায়, কীভাবে, কত সময়ের মধ্যে স্থানান্তর করা হবে- এর সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত।
আমরা একই সঙ্গে মনে করি- নিমতলী অগ্নিকা-ের পর গঠিত তদন্ত কমিটি ‘জরুরি ভিত্তিতে’ রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো স্থানান্তরের যে সুপারিশ করেছিল তা বাস্তবায়নে গড়িমসি ও ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক।
মনে রাখতে হবে- চকবাজারের আগুনও নিমতলীর মতো অতীত হয়ে গেলে সামনে আমাদের জন্য ভয়াবহ খারাপ দিন অপেক্ষা করবে। এর রকম দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে সে জন্য সবাইকে তৎপর ও সচেতন থাকতে হবে। এটাই প্রত্যাশা।
সম্পাদক, মত ও পথ