আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৭তম দিন। গ্রন্থমেলা চলে বেলা ৩টা থেকে রাত সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গ্রন্থমেলা সন্ধ্যা ৬টায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মেলায় আজ নতুন বই এসেছে ২৪৮টি।
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বইমেলা : উদ্যোগ ও অর্জন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ওসমান গণি, রেজানুর রহমান, ফরিদ আহমদ দুলাল এবং জালাল আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
প্রাবন্ধিক বলেন, বইমেলার প্রাপ্তি ও অর্জনের বিষয়টি কিছুটা আপেক্ষিক। এর অনেকগুলো প্রশংসনীয় উদ্যোগের পাশাপাশি রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা, অতৃপ্তি আর অপূর্ণতা। বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে মহান একুশে আর মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা গভীরভাবে প্রোথিত আছে তারই প্রতিফলন সবসময় বইমেলায় প্রতিফলিত হবেÑ এই প্রত্যাশা সবার।
আলোচকবৃন্দ বলেন, প্রায় চার দশক ধরে চলমান একুশের বইমেলা এখন বিশ্বের দীর্ঘসময়ব্যাপ্ত বইমেলার মর্যাদাপ্রাপ্ত। এই বইমেলার অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অসাধারণ। তবে যেনতেনভাবে বইমেলায় বই প্রকাশের তাগাদায় প্রকাশনা ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিস্থিতিরও অবতারণা হয়। এ বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রেখে বই প্রকাশনাকে একটি বাৎসরিক রেওয়াজে পরিণত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের একুশে বইমেলা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও আদৃত। তবে বইমেলায় বই প্রকাশের সংখ্যাগত দিকটির চেয়ে গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন- রশিদ আসকারী, মাহবুব রেজা, সুমনকুমার দাশ, শাহেদ ইকবাল এবং শোয়েব সর্বনাম।
গ্রন্থমেলায় হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ :
বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের উপর মৌলবাদী চক্রের সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে একুশে গ্রন্থমেলায় আজ বিকেলে তাঁকে স্মরণ করা হয়। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের তথ্যকেন্দ্রের সামনে আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। বক্তব্য প্রদান করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ, সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন প্রকাশক ওসমান গনি।
বক্তারা বলেন, হুমায়ুন আজাদের হত্যাচেষ্টার বিচার অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তাঁর আদর্শে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই তাঁকে যথাযোগ্যভাবে স্মরণ করা হবে।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন- কবি আনিসুল হক, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, বিমল গুহ, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, আশরাফ জুয়েল, মাসুদ পথিক, নওশাদ জামিল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী জি এম মোর্শেদ এবং সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী অদিতি মহসিন, কামাল আহমেদ, মো. রেজাউল করিম, অসীম দত্ত, সেমন্তী মঞ্জরী এবং ডালিয়া সুলতানা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন- সুবীর চন্দ্র ঘোষ (তবলা), অসিত বিশ্বাস (এসরাজ), সুনীল কুমার সরকার (কী-বোর্ড), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা)।
আগামীকালের কর্মসূচি :
আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিন।
সন্ধ্যা ৬:৩০টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে কবি নির্মলেন্দু গুণকে কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করা হবে। এছাড়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কারÑ চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৯, রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করা হবে।
গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাপনী সাংস্কৃতিক আয়োজন :
আগামীকাল সন্ধ্যা ৭:৫০টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
রাত ৯:১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও আয়োজন করা হয়েছে গ্রন্থমেলার সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।