সময়ের সঙ্গে বাড়ছে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা

ইমরান রহমান


২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭৩৬ জন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৭৬৫ জন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ৮৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় একই সংখ্যক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যার সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৪২টি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা বাড়ছে।

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ফলে জীবনহানি, অগ্নিদগ্ধ হয়ে বেঁচে থাকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো শটসার্কিট থেকে বেশি ঘটলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাস লিকেজ, কেমিক্যাল বিস্ফোরণ ও সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না রাখা, অসতর্কতা ও অব্যবস্থাপনার জন্যই বাড়ছে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা। এজন্য দায়িত্বরত সংস্থার যথাযথ উদ্যোগ, সতর্কতা ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭৩৬ জন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৭৬৫ জন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ৮৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় একই সংখ্যক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যার সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৪২টি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা ও স্বজনদের আহাজারী।

সর্বশেষ গত সোমবার সকালে রাজধানীর দারুস সালামে এসি থেকে আগুন লেগে দগ্ধ হয়ে লিজা আক্তার (১৭) নামে এক গৃহকর্মী নিহত হন। এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৯ জন নিহত হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক। ২০১০ সালে নিমতলী ট্র্যাজিটিতে ১২৪ জন নিহত হওয়ার পর এই ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করে সারা দেশে।

দায়িত্বশীলরা বলছেন, বড় ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটার পরে নড়েচড়ে বসে সবাই। নেয়া হয় বিভিন্ন উদ্যোগ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ফাইলেই সীমাবদ্ধ থাকে। কার্যত তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয় না। ফলে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস লিকেজ, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও শটসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটছে। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি ভস্মীভূত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

ফায়ার সার্ভিসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি খুবই অপ্রতুল। বিশেষ করে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে। যেসব ক্ষেত্রে আগুন নেভানো, মানুষকে সরিয়ে নেয়া এবং জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা দরকার, সেসব ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবল নেই। তাছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষের যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার তাও নেই। এ ছাড়া প্রশস্ত রাস্তা না থাকা, হাইড্রেন্ট পয়েন্ট না থাকা, ফায়ারের রিজার্ভ টিম না থাকাসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা এখনো রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্স ইউনিটের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধণ বলেন, প্রথমত অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে অগ্নিকাণ্ড বেশি ঘটছে। এ ছাড়াও আবাসিক এলাকায় অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন, গ্যাস লিকেজ, শটসার্কিট, সিগারেটের আগুন থেকে প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি সরকার ফায়ার সার্ভিসকে আরো সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে