মিয়ানমারের ভূমিকায় বাংলাদেশ ‘হতাশ ও ক্ষুব্ধ’

বিশেষ প্রতিনিধি

রোহিঙ্গা
ফাইল ছবি

মিয়ানমার গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বারবার আশ্বাস দিলেও তার কোনো তোয়াক্কা করছে না।

লিখিত চুক্তি ও বিভিন্ন দেশের চাপ সত্ত্বেও এখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করেনি দেশটি। এই অবস্থায় লাখ লাখ রোহিঙ্গার ভারে ন্যুব্জ বাংলাদেশ মিয়ানমারের ব্যাপারে হতাশ এবং দেশটির ওপর চরম ক্ষুব্ধ।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এই কথা।  

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ তাদের ক্ষোভ ও হতাশা খোলাখুলি প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক নিরাপত্তা পরিষদে খোলাখুলি বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার ক্রমাগত ‘ফাঁকা প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে চলেছে এবং ‘নানা বাধা’ তৈরি করছে। ফলে, উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে ‘একজন রোহিঙ্গাও স্বেচ্ছায় ফিরতে চায়নি।’ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে আরও বলা হয়েছে যে, এখন আর একজন শরণার্থীও নেওয়া সম্ভব নয়।

হতাশা ও ক্ষুব্ধতার কথা স্বীকার করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম  বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর সত্যিকারের চাপ তৈরির আর কোনো বিকল্প নেই। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক প্রয়াসের নতুন উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে… কিন্তু মিয়ানমারকে চাপ না দিলে, বাধ্য না করতে পারলে এই সমস্যার সমাধানে কোনো অগ্রগতি হবে না।

কেন তারা দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টায় আস্থা হারাচ্ছেন- এই প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, ঢাকার সঙ্গে এবং জাতিসংঘের দুটো সংস্থার সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে চুক্তি করলেও, মিয়ানমার কার্যত সেসব চুক্তিকে তোয়াক্কা করছে না।

তিনি বলেন, চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য পরিবেশ তৈরির যেসব শর্ত ছিল যেমন নিরাপত্তা নিয়ে আস্থা তৈরি, একই গ্রামে তাদের ফিরতে দেওয়া, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা – এগুলো তো হচ্ছে না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নভেম্বরে এসে এসব বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু গত তিন-চার মাসে তো কোনো উদ্যোগ দেখছি না।

মিয়ানমারের সরকার সবসময় বলে, তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু বাংলাদেশই তাদের পাঠাচ্ছে না। রয়টার্স বার্তা সংস্থা বলছে, বৃহস্পতিবারও নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জানুয়ারি মাস থেকেই তারা শরণার্থী ফেরত নেওয়ার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু জাতিসংঘ পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। কীভাবে মিয়ানমারের ওপর বিশ্বাসযোগ্য চাপ তৈরি করা সম্ভব? এই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচটি সদস্য দেশের মধ্যে ঐক্যমত্য তৈরি হলে মিয়ানমার চাপ বোধ করবে।

কিন্তু চীন এবং রাশিয়া তো এখনও মিয়ানমারের ওপর বড় কোনো চাপ তৈরিতে প্রস্তুত নয় – বিবিসির এই প্রশ্নে শাহরিয়ার ইঙ্গিত দেন, দ্বিপাক্ষিকভাবে এই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ দেন-দরবার করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, তারা তো কখনই বলেনি যে, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের কোনো সমস্যা নয়, তাদের কথা মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সমস্যা গভীর, ফলে সময় দিতে হবে… আমরা তো আর্ম টুইস্ট করতে বলছি না, আমরা তাদের বলছি মিয়ানমারে কোনো অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকলে তা সমাধানে তারা সাহায্য করুক।

তবে গতকালও নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়া তাদের অবস্থান পুর্নব্যক্ত করেছে। চীনা দূতকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, চীন মনে করে রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা এবং সমাধান তাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে আসতে থাকে। কয়েক মাসে ছয় সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগে আরও পাঁচ ছয় লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। সবমিলিয়ে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে