জামায়াতে ইসলামী যে কারণে ক্ষমা চাইবে না

বিশেষ প্রতিনিধি

জামায়াতে ইসলামী
ফাইল ছবি

নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজেদের বিলুপ্ত করবে না। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা সংগঠনটি নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হওয়ার ঘটনায় ক্ষমাও চাইবে না।

জানা গেছে, মূলত ক্ষমা না চাওয়ার পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কেবল নিষিদ্ধ হলেই নতুন নামে সংগঠন করবে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

দলের একাধিক নেতা জানান, জামায়াত বিলুপ্ত অথবা ক্ষমা না চাওয়ার পেছনে মূলত দুটি কারণ বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রথমত, জামায়াত বিলুপ্ত করে নতুন নামে কোনো সংগঠন করা সহজ হবে না। করলেও এ সংগঠন দাঁড় করানো সহজ হবে না।

দলের নেতারা বিশ্বাস করেন, বর্তমান নেতাকর্মী ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তাধারা থেকে জামায়াতের রাজনীতি করছে। নতুন নামে সংগঠন করলে এ চিন্তাধারা পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি করতে হবে।

এ রাজনীতির সঙ্গে বর্তমান জামায়াতের যেসব নেতাকর্মী আছেন, তারা সবাই থাকবেন না। এসব নেতাকর্মী আয়ের একটি অংশ প্রতি মাসে চাঁদা হিসেবে দলের তহবিলে জমা দেন। নাম পরিবর্তন হলে সেটাও বন্ধ করে দেবেন। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে নানা নামে আসা অর্থও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে তাদের নেতারা যে অর্থ পেয়ে থাকেন, তা আর পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, দলের নেতারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন না।

তারা মনে করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিধর অনেক দেশ। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে জামায়াতেরও ওই সময়ে একটা বোঝাপড়া ছিল।

তাদের ভাষ্য, এটা জামায়াতের একক কোনো বিষয় নয়; জামায়াত চাইলেও ’৭১ সালের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে পারে না। ক্ষমা চাইলে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার জন্য বিব্রত হবেন। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দণ্ড পাওয়া নেতারা অপরাধী হবেন নেতাকর্মীদের কাছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তা ছাড়া তাদের টিকে থাকা সম্ভব নয়।

জামায়াত থেকে পদত্যাগ করা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকও মনে করেন, স্বাধীনতার বিরোধিতা করে কোনো রাজনৈতিক দলের টিকে থাকা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে জামায়াতের নতুন সংগঠন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। সম্প্রতি জামায়াত বিলুপ্ত করে নতুন নামে সংগঠন করা এবং ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে সংগঠনটির তরুণ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দলীয় ফোরামে প্রস্তাব দেয়। পক্ষে-বিপক্ষে দুটি ধারা দেখা দেয়। এরই মধ্যে লিখিত প্রস্তাব আমলে না নেওয়ায় সংগঠনটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক দল থেকে পদত্যাগ করেন।

দলটির নেতারা জানান, সংস্কার প্রস্তাবকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্ব একটি কমিটি করেন। কমিটির প্রধান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান।

অন্য সদস্যরা হলেন-মিয়া গোলাম পরওয়ার, সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, আবদুল হালিম ও সেলিম উদ্দিন। এরা সবাই সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া নেতা।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় দুই নেতা বলেন, এখন সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নেওয়াদের চাপে রাখার কাজ করছেন বিরোধীরা। তাদের বেশিরভাগই বর্তমানে সংগঠনের নীতিনির্ধারণী ফোরামে রয়েছেন। ইতোমধ্যে সংস্কারপন্থিদের বিভিন্নভাবে শায়েস্তা করা শুরু করেছেন, যেন কেউ জামায়াতের সংস্কার বিষয়ে অথবা আবদুর রাজ্জাককে সমর্থন করে কোনো কার্যক্রম করতে না পারেন।

কমিটির এক সদস্য জানান, সবকিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে মৌলিক কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। এ কমিটি একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। তাদের এই প্রতিবেদনের ওপর আস্থা নেই সংস্কারপন্থিদের।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে