নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ হুজি’র দুই সদস্যসহ ১৪ জনকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ডিবি (পূর্ব) বিভাগ অভিযান চালিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গ্রেফতার করেছে।
আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল বাতেন।
তিনি জানান, হুজি তাদের সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে লুট করা অর্থের ৩০ শতাংশ টাকা সংগঠনের কাজে ব্যয় করে।
আবদুল বাতেন জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন— ডাকাত সর্দার মোফাজ্জল হোসেন ওরফে বড় ভাই ওরফে দাদা ওরফে দাদু, মো. জহির উদ্দিন ভূইয়া ওরফে চৌধুরী, মো. আতিকুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান ওরফে নয়ন, লাড্ডু মোল্লা, কাইয়ুম শিকদার, আলাউদ্দিন শেখ, মুন্সি খসরুজ্জামান ওরফে মেজর, মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার, সুব্রত দাস, মিন্টু কর্মকার, ও অলিউল্লাহ হাওলাদার ওরফে অলি।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর ধোলাইপাড় মোড় সংলগ্ন এশিয়া জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়, দুটি ৯ এমএম পিস্তল, দুটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, ৩৩ রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি, একটি কাটার, তিনটি হেক্সো ব্লেড, একটি স্লাই রেঞ্জ, দুটি প্লাস, দুটি স্ক্রু ড্রাইভার, একটি স্কচ টেপ, পাঁচটি কালো কাপড়ের মুখোশ, একটি ছোড়া ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত দলের সদস্যরা জানায়, তারা ধোলাইপাড় মোড় এলাকার পূবালী ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডদেরকে জিম্মি করে ডাকাতি করার জন্য পিকআপ গাড়ি ও অস্ত্রশস্ত্রসহ সেখানে সমবেত হয়েছিল। এর আগেও তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নয়টিরও বেশি ডাকাতি করেছে।
গত ১৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানিতে ডাকাতি চেষ্টাকালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। সেই ঘটনায় পুলিশের এক সদস্য বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুত্বর আহত হয়েছে। ইতিপূর্বে এই ডাকাতরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করেছে। এমনকি ডাকাতির সময় ভারতে গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেলও খেটেছে।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত দলের সদস্য মো. আতিকুর রহমানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার রামপুরার বাসায় আরও আগ্নেয়াস্ত্র আছে। এমন তথ্য জানার পরে আতিকুরকে নিয়ে তার রামপুরার বাসায় ওইদিনই রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে অভিযানে চালায় ডিবির ডেমরা জোনাল টিম।
অভিযানের সময় ওই বাসা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) দুই সক্রিয় সদস্য হাফিজ ওরফে খালিদ ওরফে ইব্রাহীম গাজী ও মামুনুর রশিদ ওরফে বাচ্চু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি একে ২২ বোরের রাইফেল, একটি পাইপ গান, আট রাউন্ড গুলি, জিহাদী বই, ১০ কেজি গান পাউডার ও সাড়ে তিন লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত হুজির দুই সদস্যকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি উজ্জ্বলের নির্দেশে তারা হুজি সংগঠন পরিচালনা করছিল। আর এ লক্ষ্যেই তারা এই সমস্ত উদ্ধারকৃত মালামাল হেফাজতে রেখেছিল।
তিনি জানান, তারা কাশিমপুর কারাগারে অবস্থানরত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উজ্জ্বলকে যেকোনো উপায়ে মুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল। তাদের হুজি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্যান্য সহযোগীরা মিলে বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে। এরপর লুট করা অর্থের ৩০ শতাংশ টাকা সংগঠনের কাজে ব্যয় করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ি থানায় দুটি ও রামপুরা থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান আব্দুল বাতেন।