আজ দুপুরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা ওবায়দুল কাদেরকে দেখেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।
ডা. শেঠি বেরিয়ে এলে এগিয়ে যান ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা কাদের।তিনি তার স্বামীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কার্ডিওলজিস্ট কাদেরপত্নীকে বলেন, ‘ইউ আর ভেরি লাকি।ইউর হাজবেন্ড ইজ ভেরি লাকি।হি ইজ নাউ ইন সেভ পজিশন।’
সেইসময় কাদেরপত্নী ডা. শেঠির প্রতি ও মেডিকেল বোর্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইসরাতুন্নেসা কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডাক্তার শেঠি বলেছেন উনার (কাদের) অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে সাড়া দিয়ে আজ দুপুরে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় কার্ডিওলজিস্ট ডা. শেঠি কাদেরপত্নীকে আশ্বস্ত করে বলেন, আপনি অনেক ভাগ্যবান।তার সব চিকিৎসাই এখানে দেয়া হয়েছে। আপনার স্বামী এই জটিল মুহূর্তে এখানে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে যে চিকিৎসা পেয়েছেন ইউরোপ-আমেরিকাতেও এর চেয়ে ভালো চিকিৎসা পেতেন না।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্য বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, বিএসএমএমইউর চিকিৎসার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ডা. দেবী শেঠি।
ডা. দেবী শেঠী সেতুমন্ত্রীর করা সব রিপোর্ট দেখেন। এনজিওগ্রাম দেখার পর কিছুক্ষণের জন্য তাকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। পরে তিনি (ডা. শেঠী) বলেন, তার যা চিকিৎসা প্রয়োজন সবটাই করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি চিকিৎসা ইউরোপ-আমেরিকাতেও হয় না। এখন চাইলে আপনারা তাকে শিফট করতে (দেশের বাইরে) পারেন।
ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার উন্নতি হলেও শঙ্কামুক্ত নন। তাঁর শারীরিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তাঁর রক্তে ইনফেকশনের ঝুঁকি আছে। রক্তে ইনফেকশনের মাত্রা ১৮০০ ছিল, যা বেড়ে ২৬০০ হাজার। তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে।
কনক কান্তির ভাষ্য, ‘উনারা (ডা. দেবী শেঠি ও সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা) বললেন যে বিভিন্ন রকম জটিলতা হতে পারে। এখন যেহেতু রিলেটিভলি অনেক সেফ পজিশনে আছে (ওবায়দুল কাদের) আপনাদের যদি এ রকম কোনো চিন্তাভাবনা থাকে (বিদেশে নেয়ার) তা হলে দিস ইজ দ্য অপটিমাল টাইম টু শিফট হিম। পরে যদি এর চেয়ে আরও জটিলতা তৈরি হয়, তখন শিফট করাটা রিলেটিভলি মোর রিস্কি। তিনি (ডা. দেবী) বলেন, এখন যদি আপনারা নিতে চান তা হলে আমারও অ্যাডভাইস হবে যে আজকে দিনে উনাকে শিফট করার।’
কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘যেহেতু আমরা একটা জিনিস চিন্তা করে রেখেছিলাম একটা জটিলতার কথা। তার (ওবায়দুল কাদের) কোনো জটিলতা তেমন হয়নি। একটা সামান্য কিছু জটিলতা এবং তাকে (দেবী শেঠি) যেহেতু আমন্ত্রণ করা হয়েছে, সেহেতু আমরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, যেটা মাউন্ট রয়েল এলিজাবেথ থেকে আনা হয়েছিলো সেটাকে আমরা রেখে দিয়েছিলাম। তাদেরকে আমরা বলেছি, আপনি যতদ্রুত সম্ভব তাকে স্থানান্তর করতে পারবে। উনার মন্তব্য পাওয়ার পর আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্যটি দিলাম এবং তিনিও বললেন, ঠিক আছে তা হলে তাদের নিয়ে যেতে বল।’
এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সবশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন ডা. দেবী শেঠিসহ মেডিকেল বোর্ড। এ সময় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় আসা তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও ছিল।
ওবায়দুল কাদেরকে দেখার পর ডা. দেবী শেঠি তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি জানান, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা উন্নতির দিকে। এই মুহূর্তে তাকে বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে কোনো ঝুঁকি নেই। ডা. কনক কান্তি জানান, ওবায়দুল কাদেরকে মাউন্ট এলিজাবেথে নেয়া হচ্ছে।