বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে টেকসই সমাধান খুঁজছে সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি

বুড়িগঙ্গা যাতে স্থায়ীভাবে প্রাণ ফিরে পায়। ফাইল ছবি

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গার তীর থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের পর এবার পুরনো পরিকল্পনার সঙ্গে নতুন টেকসই সমাধান খুঁজতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে উচ্ছেদ করা জায়গা আবারও বেদখল রুখতে আগের চেয়ে আরো বাস্তবমুখী পদক্ষেপের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।

নতুন এমন উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজ সোমবার নৌপরিবহন সচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কারিগরি ও বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা সরেজমিনে বুড়িগঙ্গা নদী পরিদর্শনে নামছেন। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ে একই ধরনের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।

অন্যদিকে রোববার ঢাকা নৌবন্দরের একটি টিম উচ্ছেদকৃত কিছু জায়গায় আবারও দখলচেষ্টার অভিযোগে অভিযান চালায়। এ সময় ইসলামবাগ এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রিকশার গ্যারেজ উচ্ছেদ করা হয়।

নৌপরিবহনসচিব মো. আবদুস সামাদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বুড়িগঙ্গা সুরক্ষার আগের পরিকল্পনার সঙ্গে আরো টেকসই উপায় বের করতে চাই। সে জন্য নতুন করে কিছু কাজ শুরু করেছি। কারিগরি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করছি এবং সরেজমিনে পরিদর্শনে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।

সচিব আরো বলেন, আমি মনে করি এবার যা করব তা যেন স্থায়ী এক পরিবেশ তৈরি করে। বুড়িগঙ্গা যাতে স্থায়ীভাবে প্রাণ ফিরে পায়।

এদিকে ঢাকা নৌবন্দর কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক মো. আরিফ উদ্দিন বলেন, আমাদের উচ্ছেদ অভিযান আবার শুরু হচ্ছে। আর উচ্ছেদকৃত জায়গা কোথাও কোনো রকম বেদখল হয়নি। একটি জায়গায় অস্থায়ীভাবে কিছু রিকশা রাখা হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে তা উচ্ছেদ করে দিয়েছি।

আরিফ উদ্দিন আরো বলেন, বুড়িগঙ্গা সুরক্ষায় এবার টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ফলে উচ্ছেদকৃত স্থান আর বেদখলের সুযোগ থাকবে না।

বিআইডাব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার চলমান অভিযানে ঢাকায় দখলমুক্ত করা নদীর জমি যাতে আবার বেহাত না হয়ে যায় তা নিশ্চিত করার উপায় নিয়ে কাজ করছে তারা। আদি বুড়িগঙ্গায় উদ্ধারকৃত জমিতে নজরদারি বাড়িয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ। আর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেখানে বিনোদন বা পর্যটনকেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

এবারের অভিযানে আদি বুড়িগঙ্গার দুই পারে তিন হাজার ২০০ মিটার ভূমি দখলমুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় জোনের প্রধান প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাস।

তিনি বলেন, ডেব্রিস (ভগ্নাবশেষ) অপসারণ করে আমরা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেব আমাদের এলাকা।

উচ্ছেদের পর উদ্ধারকৃত ভূমি দখলমুক্ত রাখতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাউবো তাদের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় পুনরুদ্ধারকৃত জমির সীমানা চিহ্নিত করে রাখবে। আর দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরির জন্য কাজ করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কী ধরনের প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে তা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করবে তারা।

উদ্ধারকৃত জমি স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত রাখার উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েরও একটি সভায় গতকাল জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য নদী ও খালের প্রবাহ উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে