খালাফ হত্যা মামলার আসামির ফাঁসি কার্যকর

মত ও পথ প্রতিবেদক

ঢাকায় সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ আল আলী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আসামি সাইফুল ইসলামের ফাঁসি গতকাল রবিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে কার্যকর করা হয়েছে। গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এ রায় কার্যকর করা হয়। সিনিয়র জেল সুপার মো. শাজাহান ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গতকাল বিকেলে ১৫ স্বজন কারাগারে গিয়ে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা করে। 

ওই কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান জানান, উচ্চ আদালতের রায় কারাগারে এলে বিধি মোতাবেক সব প্রক্রিয়া শেষ করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতেই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সাইফুল ইসলাম (৪৮) বাগেরহাটের শরণখোলার মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের ছেলে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি ছিলেন।

কাশিমপুর কারাগার সূত্রে জানা গেছে, লাল কাপড়ে মোড়ানো ফাঁসির পরোয়ানা রবিবার কারাগারে পৌঁছায়। পরে কারা কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পর ফাঁসির মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করে। তার আগে সাইফুলের স্বজনদের শেষ দেখা-সাক্ষাতের জন্য ডেকে পাঠানো হয়। 

রাত ৯টার দিকে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মঞ্জুরুল হক, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো. আবু নাসার উদ্দিন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শরিফুর রহমান কারাগারে উপস্থিত হন। 

জানা যায়, ২০১২ সালের ৫ মার্চ মধ্যরাতে গুলশানে নিজের বাসার কাছে গুলিবিদ্ধ হন সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলী (৪৫)। পরদিন ভোরে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। হত্যার দুই দিন পর পুলিশ গুলশান থানায় একটি মামলা করে। ঘটনার সাড়ে চার মাস পর সাইফুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাঁদের ‘ছিনতাইকারী’ বলে জানায়। তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। সেখানে গ্রেপ্তার চারজনের সঙ্গে সেলিম চৌধুরী নামে পলাতক আরেকজনকে আসামি করা হয়।

ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর এ মামলার রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে। উচ্চ আদালত ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর আপিল রায়ে শুধু সাইফুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকি চার আসামির মধ্যে আল আমীন, আকবর আলী ও রফিকুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। 

পলাতক সেলিম চৌধুরীকে খালাস দেন বিচারক। উচ্চ আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিঞার নেতৃত্বে চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর আপিল খারিজ করে দেন। ওই রায়ের ফলে সাইফুলের মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজনের যাবজ্জীবন সাজার আদেশ বহাল থাকে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে