লবণাক্ততা বাড়তে থাকায় উপকূলে শুকাচ্ছে বোরো চারা

সারাদেশ ডেস্ক

শুকিয়ে যাওয়া বোরো চারা। ছবি : সংগৃহিত

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ফসলি জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে বোরো চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। ধানের চারা রোপণ করার পর তা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কোনো কোনো কৃষক দু’তিন দফায় বোরো ধানের চারা রোপণ করেও বাঁচাতে পারছেন না।

বিশেষ করে এতে সাতক্ষীরার জেলার দেবহাটা, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলাতে চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদন কমে যেতে পারে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

universel cardiac hospital

কৃষি বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে মৌসুমী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ফসলি জমির লবণাক্ততা বেড়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৭৩৩ হেক্টর জমিতে।

এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ৬০০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১২ হাজার ৭৭১ হেক্টর, তালায় ১৮ হাজার ৭১৭ হেক্টর, দেবহাটায় ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৫ হাজার ২৯০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৬ হাজার ৪৬৫ এবং শ্যামনগরে ২ হাজার ৩০ হেক্টর।

সূত্রটি আরো জানায়, চলতি মৌসুমের এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৬৭ হাজার ৫১৫ হেক্টর পরিমাণ। গত মৌসুমে জেলায় বোরো আবাদ লক্ষ্য ছিলো ৭৩ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে।

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের কৃষক শফিক মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে অন্যের ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বোরো চাষ করেছেন। কিন্ত জমিতে অতিমাত্রায় লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় বোরো ধানের চারা রোপণ করার ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে এসব চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।

এতে করে ৫ বিঘা জমির বোরো বীজতলা, চারা রোপণ, সেচ এবং সার-কীটনাশক ব্যবহার করে এ পর্যন্ত ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্ত ক্ষেতের চারার যে অবস্থা তা সমুদয় খরচ লোকসানে পরিণত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

একই এলাকার কৃষক মনির মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। গেল বছর একই পরিমাণ জমিতে বোরো চাষ করে উৎপাদন উঠিয়ে ২৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিলো তার। কিন্ত চলতি মৌসুমে জমিতে চারা রোপণ করে বাঁচাতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ৩ বিঘার মধ্যে অন্তত দেড় বিঘা পরিমাণ জমির বোরো চারা শুকিয়ে মারা গেছে। এতে তার প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা লোকসান হয়ে গেছে।

দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, কিছু এলাকায় তীব্র শীত এবং লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় বোরো ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এখনো অনেক সময় আছে সামনে চারা রোপণ করার। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

আশাশুনি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা ওলিউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার প্রতাবনগর, শ্রীউলা ও খাজরা ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ওই তিনটি ইউনিয়নে বোরো ক্ষেতে চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় চলতি বছর ফসলি জমিতে লবণাক্ততা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। ফলে বীজতলার পাশাপাশি রোপণকৃত চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও কৃষক একাধিকবার চারা রোপণ করেও বাঁচাতে পারেনি।

বর্তমানে আশাশুনির অধিকাংশ এলাকায় ১১ থেকে ১৪ ডিএস মাত্রায় লবণাক্ততা দেখা দিচ্ছে। যা ফসলের জন্য খুবই ক্ষতিকর বলে জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, আবহাওয়া জনিত কারণে চলতি মৌসুমে জেলার কিছু এলাকায় বোরো চাষে ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, কখনো তীব্র শীত কখনো গরম আবার কখনো জমির লবণাক্ততা বাড়ছে। এতে শুধু বোরো আবাদে নয়, অন্যান্য ফসলেরও ক্ষতির কারণ হচ্ছে। তবে যে এলাকায় বোরো বীজতলা বা চারা মরে যাচ্ছে সেসব এলাকার কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে