মার্কিন কংগ্রেসে জামায়াত নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব

ডেস্ক রিপোর্ট

ছবি : সংগৃহিত



ধর্মীয় স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় জামায়াতের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে৷

পাশাপাশি বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও জামায়াতসহ অন্যান্য উগ্র রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয় উত্থাপিত  প্রস্তাবটিতে ৷

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য জিম ব্যাংকস এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন৷ প্রস্তাবটিতে পাকিস্তানকেও দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় জামায়াতকে নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়৷

বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উল্লেখ প্রস্তাবটিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে দেশটির স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রায়  ৩০ লাখ লোক প্রাণ হারান।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা, বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও আহমদিয়ারা জামায়াত ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন৷

আল কায়েদা ও তালেবানের সঙ্গে জামায়াত ইসলামীর সদস্যদের যোগাযোগ থাকার কথা উল্লেখ করে প্রস্তাবটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনজীবী ও বিরোধী রাজনীতিক কামাল হোসেন প্রকাশ্যেই বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন৷

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জামায়াতের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যাংকস বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রস্তাবেও জামায়াতে ইসলামীর কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বিএনপিকে আহ্বান জানানো হয়েছে৷

রিপাবলিকান দলের এই কংগ্রেসম্যানের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রেও জামায়াতে ইসলামীর ভাবধারা পোষণ করে এমন অনেক সংগঠন রয়েছে, যারা তহবিল সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত৷

জামায়াতে ইসলামী ও এর সহযোগী ভাবধারার সংগঠনগুলো দক্ষিণ এশিয়াতে আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ এ অঞ্চলের ধর্মনিরেপক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেন জিম ব্যাংকস৷

জামায়াতের ইতিহাস: ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামীর যাত্রা শুরু হয়৷ দলটির প্রতিষ্ঠাতা সায়েদ আবুল আলা মওদুদী৷ এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর গঠিত হয় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান৷ বাংলাদেশ অংশের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী, যার প্রধান ছিলেন গোলাম আযম৷ ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়৷ কিন্তু কয়েকমাস পরই ঐ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক মামুন আল মোস্তফা সম্প্রতি এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘‘১৯৪১ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সুবিধা পেলেই বদলে ফেলেছে জামায়াত৷’’ তিনি বলেন, অন্য অনেক দলের মতোই যেখানে লাভ দেখেছে, বিনা দ্বিধায় সে পথে গেছে দলটি৷ ‘‘জামায়াত পাকিস্তানের বিরোধিতা করলেও ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব পাকিস্তানে চলে যায়৷’’

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে জাময়াতে ইসলামী৷ শুধু বিরোধিতা নয়, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযুক্ত এই দলটি।

স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়৷ কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়৷ ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সুযোগ করে দিলে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামে জামায়াত কাজ শুরু করে৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই পালিয়ে যাওয়া গোলাম আযম ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে কাজ শুরু করে৷

জামায়াত বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয় ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে৷ সেই বার তারা ১০টি আসন পায়৷ এরপর ১৯৯৬ সালে ৩টি, ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করে ১৭টি আর ২০০৮ সালে দু’টি আসন লাভ করে৷ এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জামায়াতের দু’জন নেতা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷

জামায়াত নেতাদের বিচার : নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২৫শে মার্চ যুদ্ধাপরাধের বিচারে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার৷ ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াত নেতাদের দণ্ড ছাড়াও দলটিকেও যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷

যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের জন্য জামায়াত সবসময়ই সক্রিয় ছিল৷ এ লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ খরচ করে বিচার বন্ধ ও জামায়াত নেতাদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করা হয়৷ এই কাজের নেতৃত্বে ছিলেন মীর কাসেম আলী৷ তিনি মূলত জামায়াতের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান দেখভাল করতেন৷ মীর কাসেম আলির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জামায়াতের অর্থনৈতিক ভিত্তিতে আঘাত লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷

নিবন্ধন বাতিল : সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে৷ ফলে দলটি এখন আর দলীয়ভাবে এবং দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না৷ তবে দল হিসেবে জামায়াত এখনও বৈধ একটি রাজনৈতিক সংগঠন৷

যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ বর্তমানে মকবুল আহমেদই দলটির আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন৷



শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে