বান্দরবান জেলা সদরের রাজার মাঠে আজ শুক্রবার বোমাং সার্কেলের ১৪১তম রাজপূণ্যাহ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সরকারের পক্ষে সার্কেল চিফ বা রাজা বাহাদুর কর্তৃক বার্ষিক জুম ফসল কর এবং ভূমিকর আদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠান স্থানীয়ভাবে রাজপূণ্যাহ নামে পরিচিত।
বোমাং সার্কেলভুক্ত বান্দরবান পার্বত্য জেলার সব কয়টি (৯৫টি) মৌজা এবং কর্ণফুলি নদীর এপারে অবস্থিত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ১৪টি মৌজার হেডম্যান (মৌজা প্রধান) এবং কার্বারীগণ (পাড়া প্রধান) এ দিনে জেলা সদরে এসে রাজার কাঠে আদায়কৃত খাজনা পরিশোধ করেন।
১৮৭৫ সাল থেকে শুরু হওয়া কর আদায়ের এই আনুষ্ঠানিকতা বোমাং সার্কেলের রাজারা বংশ পরম্পরায় ধরে রেখেছেন।
কৃষিমন্ত্রী ডা. আবদুর রাজ্জাক এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে শুক্রবার সকালে ১৪১তম রাজপূণ্যাহ উৎসব উদ্বোধন করেন।
বোমাং সার্কেলের ১০৯টি মৌজার হেডম্যান-কার্বারী এবং সর্বস্তরের মানুষের সমাবেশে দেয়া ভাষণে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমি এবং উ চ প্রু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ব্যাচের ছাত্র। আজ আমি সরকারের মন্ত্রী হয়েছি। কিন্তু সরকারের মন জয় করে উ চ প্রম্ন হয়ে আছেন জনগণের রাজা। এটি দেখে আমার ভালো লাগছে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সকল ধর্ম-বর্ণ ও জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নকে আরো বেগবান করতে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, মেধাবী জাতি গঠন করার জন্যে পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য দরকার। এখন দেশে চাহিদার বাড়তি খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে। তাই নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকার সকল মানুষের জন্যে পুষ্টিযুক্ত খাবার নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে ১৭তম বোমাং রাজা কৃষিবিদ উ চ প্রু তার বার্ষিক অভিভাষণে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি রক্ষায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। রাজা বলেন, রাজপূণ্যাহ পাহাড়ি-বাঙালি সবার সম্মিলিত উৎসব। এ কারণে পাহাড়ি জনগোষ্ঠির কৃষ্টি ও মুল্যবোধ ধরে রাখার ক্ষেত্রে তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
কৃষি সচিব, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতম কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিভিন্ন মৌজার হেডম্যানগণ ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী অষ্টাঙ্গে প্রণাম করে রাজাকে স্ব স্ব মৌজার জুমকর ও ভুমিকর প্রদান করেন।
দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে সার্কেল চিফ বা রাজাদের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব আদায়ের রীতি প্রচলিত নেই। কিন্তু ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন অনুযায়ী সার্কেল চিফ বা রাজাগণ সরকারের পক্ষে জমি ও জুম ফসল কর আদায় করে থাকেন।
আদায়কৃত খাজনা থেকে মৌজা হেডম্যান ৩৭ শতাংশ, সার্কেল চিফ বা রাজারা ৪২ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ২১ শতাংশ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়।
পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি সার্কেলে ভাগ করে সরকার এই অঞ্চলে ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, উত্তরাধিকার নির্ধারণ, সামাজিক বিচারাদি এবং খাজনা আদায়ের দায়িত্ব অর্পণ করেছে। অন্য দুটি সার্কেলে (চাকমা সার্কেল এবং মং সার্কেল) বার্ষিক কর আদায় করা হলেও এই আনুষ্ঠানিকতাকে রাজপূণ্যাহ হিসেবে উদযাপিত করা হয় না।
প্রতিবছর রাজপূণ্যাহকে উপলক্ষ করে তিনদিনের লোকজ মেলা আয়োজিত হলেও প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় এবার মেলা বসছে না। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর হাজারো মানুষকে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা গেছে।