তৈরি পোশাক খাতের নারী শ্রমিকদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান রক্তসঞ্চালক হিসেবে বলা হলেও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি শিক্ষার অভাবে কাজ হারিয়ে কর্মস্থল থেকে ছিটকে পড়ছে তারা।
অথচ এ খাতের কল্যাণেই গ্রামের সাধারণ নারীরা, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কম, তারা সামাজিক ক্ষমতায়নসহ পরিবারের দায়িত্ব নিতে অগ্রগামী হয়েছে।
পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের গোড়াপত্তন নারী শ্রমিকের হাতেই। তখন মজুরি বলতে তেমন কিছুই ছিল না। পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সমাজে মূল্যায়নও ছিল না। সেই অবস্থায় বেকার থাকা পুরুষদের আকর্ষণ করতে পারেনি গার্মেন্ট কারখানার চাকরি। নারী শ্রমিকদের ওপর ভর করেই এ শিল্প এখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানিতে এই সেরা অবস্থান পেতে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি সুবিধা নিতে ব্র্যান্ডিং হিসেবে সরকার ও পোশাক কারখানার মালিকরা তুলে ধরেছে এই খাতের ৪০ লাখ নারী শ্রমিককে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রযুক্তির প্রভাবে পোশাক নারী-পুরুষ শ্রমিকদের কর্মসংস্থান কমছে। কেননা নারীরা প্রযুক্তিতে সহজে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তারা কর্মহীন হয়ে পড়ছে।
তিনি আরো বলেন, বড় কারখানাগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার কারণে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমছে, বিশেষ করে সোয়েটার কারখানাগুলোতে। এ ছাড়া নারী শ্রমিকদের শিক্ষার হারও কম। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারি-বেসরকারিভাবে তাদের প্রশিক্ষণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবে আশার কথা, চাকরি ছেড়ে যাওয়া নারীরা এখন বিকল্প আয়ের দিকেও হাঁটছে। গ্রামে ফিরে গিয়ে জমি কিনে কৃষিকাজ করছে, দর্জির দোকান করছে, ভ্যান গাড়ি কিনে ভাড়া দিচ্ছে।
সম্প্রতি তৈরি পোশাক কারখানা নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগও (সিপিডি) একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতেও বলা হয়, ২০১৫ সালে পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল ৬৪ শতাংশ। এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৬০.৮ শতাংশ। এতে আরো বলা হয়, নারীর তুলনায় পুরুষ কর্মীরা ৩ শতাংশের বেশি মজুরি পাচ্ছে। পুরুষ শ্রমিকের গড় মজুরি সাত হাজার ২৭০ টাকা আর নারী শ্রমিকের মজুরি সাত হাজার ৫৮ টাকা। দেশের ১৯৩টি পোশাক কারখানার দুই হাজার শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে তারা এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কারখানায় যন্ত্রনির্ভশীলতা বাড়ার কারণে পোশাক খাতে নারী শ্রমিক কমছে। এর মধ্যে শ্রম আইনের ৬ ও ৭ গ্রেডের শ্রমিকই বেশি। মজুরি বাড়ায় এবং ভবিষ্যতে আরো বাড়ার সম্ভাবনা থেকে মালিকরা ব্যয় কমাতে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াচ্ছে।