উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘিরেই উত্তাপ

বিশেষ প্রতিনিধি

উপজেলা নির্বাচন
ফাইল ছবি

তেমন কোনো দায়িত্ব বা ক্ষমতা নেই, তবু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে খানিকটা নির্বাচনী আমেজ বা উত্তাপ ধরে রেখেছে।

এ পদে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ায় বেশির ভাগ উপজেলায়ই দলটির কয়েকজন করে নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তাঁদের নির্বাচনী তৎপরতায় উপজেলাগুলোতে কিছুটা হলেও উত্তাপ বিরাজ করছে।

এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত উপজেলায় এমন চিত্র দেখা গেছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা বলছেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের তেমন কোনো দায়িত্ব বা ক্ষমতা না থাকলেও পদটি মর্যাদার বলেই তাঁরা লড়ছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম চার ধাপে ৪৫৯ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হলে এ সংখ্যা আরো বাড়বে।

প্রথম ধাপে ৮৬ উপজেলার মধ্যে ১৬টিতে, দ্বিতীয় ধাপে অন্তত ২৫টিতে, তৃতীয় ধাপে ৩০ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী আছেন।

চতুর্থ ধাপের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় এখনো শেষ হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত চতুর্থ ধাপে ২৫ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী আছেন। ১৩ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে এ সংখ্যা আরো বাড়বে।

ফুলতলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মৃণাল হাজরা গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে যুক্ত আছি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা সব রাজনৈতিক নেতারই থাকে। ভাইস চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা বা কাজ যাই হোক জনপ্রতিনিধি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই প্রার্থী হয়েছি। জাতীয় নির্বাচনে তো সিনিয়র নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেখানে আমাদের  সুযোগ কম। কিন্তু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ আমাদের জন্য সহজতর।

নেত্রকোনা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাসুম হাসান জামাল বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনসাধারণের সেবা করার জন্যই মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামকে শহর করার যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন সেখানে আমিও জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রাখতে চাই।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। ফলে নির্বাচন যেন একেবারে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন না হয় সে জন্য ভাইস চেয়ারম্যান পদটিতে দলীয় প্রার্থী দেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান পদেও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর না হওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক নাসিম রেজা নূর দিপু।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বাবলু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সেলিম হোসেন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহীনুর ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে প্রচার চালাচ্ছে তাঁদের।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা ও পাঁচবিবিতে আওয়ামী লীগের ১১ জন নেতা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সেখানে নির্বাচনী আবহ বিরাজ করছে।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মকলেছার রহমান জিল্লুর, আইনবিষয়ক সম্পাদক আবু ইউনুস মো. লেনিন, সদস্য মফিদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ সমর্থক রফিকুল ইসলাম প্রধান ও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য আমজাদ হোসেন বাবলা।

কেন্দুয়ায় নির্বাচনী আমেজ ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের তিন ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তাঁরা হলেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা মামুনুল কবির খান।

খুলনার ফুলতলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের রিপন ও মৃণাল হাজরা, খুলনা জেলা যুবলীগের সহসভাপতি জিয়া হাসান তুহিন, ফুলতলা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস রবিন বসু ও ফুলতলা থানা যুবলীগ নেতা সজীব হাসান লিটু ভূঁইয়া।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে