চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনার সময়। এ নিয়ে ব্যাংকগুলো বাড়তি চাপে রয়েছে।
এর পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে। মূলধন ঘাটতি পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ব ৪ ব্যাংক সরকারের কাছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। অথচ বরাদ্দ মাত্র ১৫শ’ কোটি টাকা।
সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে তাদের মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ চেয়ে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
সূত্র জানায়, বহুদিন ধরেই ব্যাংকগুলো প্রবল মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে। মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। তাদের প্রয়োজন প্রায় সাত হাজার ৯৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। মূলধন ঘাটতির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রয়োজন ৬ হাজার কোটি টাকা।
বেসিক ব্যাংকের দরকার ৪ হাজার কোটি টাকা। আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য চেয়েছে ৭৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ পূরণেও প্রয়োজন আরো এক কোটি ১২ লাখ টাকা।
এ দিকে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনার ১৫ মাসের সময়সীমা শেষ হচ্ছে চলতি মাসে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানতের অনুপাত ৮৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৮৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। কিন্তু এখনো অনেক ব্যাংক নির্ধারিত সীমার চেয়ে অনেক ওপরে রয়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকের এ সীমা ৯৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে।
বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের সময় ফুরিয়ে আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যাংকাররা। তারা জানিয়েছেন, যারা ঋণ নিয়েছেন তাদের অনেকেই ঋণ পরিশোধ করছেন না। বেড়ে গেছে খেলাপি ঋণ। ফলে আলোচ্য সময়ে ঋণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি বরং সুদ যুক্ত হওয়ায় তা আরো বেড়ে গেছে। বাড়তি ঋণ প্রবাহ সমন্বয় করার একমাত্র উপায় ছিল আমানত প্রবাহ বাড়ানো।
কিন্তু গত এক বছরে ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবাহ বাড়েনি বরং কমেছে। এর ফলে অনেকের পক্ষেই বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি। এমনি পরিস্থিতিতে আগামী ৩১ মার্চ সময়সীমা শেষে কিভাবে সমন্বয় করা যাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যাংকাররা।
রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাজেটে মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১৫ শ’ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো চেয়েছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। সরকারের পক্ষে মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলোর চাহিদামত অর্থ যোগান দেওয়া সম্ভব নয়।
জানা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে সরকারি ব্যাংককে মূলধন ঘাটতি পূরণে কী পরিমাণ অর্থ চলতি অর্থবছরে দেওয়া হবে তার একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এই খসড়া অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেওয়ার কথা ৮৪৯ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংককে ১০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকে ৫০ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে ৫০০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য মূলত অর্থ ছাড় করে অর্থ বিভাগ। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কোনো চাহিদাপত্র পায়নি। পেলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী জুনে মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ ছাড় শুরু হবে। তবে এই অর্থের পরিমাণ কোনোভাবে ১৫ শ’ কোটি টাকার বেশি হবে না।
অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে তাদের চাহিদামত অর্থ পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়বে কিনা সেটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের সময়সীমা প্রসঙ্গে বাংলাংদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৫ মাস পরে এসে আবার বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের সময় হেরফের করা হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা আরো প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে। ফলে বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের নির্ধারিত সময় কোনোভাবেই পরিবর্তন করা হবে না বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত চার অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংক বেসিক ব্যাংককে। এই ব্যাংককে মোট দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।
বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ০৩ কোটি টাকা। একই ভাবে জনতা ব্যাংককে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকে ৩১০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।