ডাকসু নির্বাচন : আপস কী তবে টিকছে না?

বিশেষ প্রতিনিধি

নুর-শোভন
ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হককে বরণ করে নিচ্ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১২ মার্চ। ছবি সংগৃহিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফল বাতিল চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রায় সারা দিন বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগের একাংশ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অন্যান্য দল ও জোটের নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এসবের মধ্যে হঠাৎ ছাত্রলীগ বিক্ষোভ বন্ধ করে দিয়ে ডাকসুর নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের সঙ্গে দেখা করে এবং আপস করে ফেলে।

universel cardiac hospital

ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই কিছুটা অবাক। তবে পরবর্তী সময়ে প্রশ্ন উঠেছে, এই আপস কি শেষ পর্যন্ত টিকবে? কারণ ছাত্রলীগবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো এরই মধ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক ও তাঁর সহকর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা-কর্মীরা ডাকসু নির্বাচনে কোটা আন্দোলনকারীদের প্যানেলের সদস্যদের ওপরও হামলা করেন। ধাওয়া খেয়ে নুরুল ও অন্য সহকর্মীরা টিএসসির ভেতর ঢুকে পড়েন। এ সময় নুরুল হককে ‘শিবির’ সদস্য আখ্যা দিয়ে স্লোগান দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এছাড়া বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে নিজেদের অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে ছাত্রলীগ। এরপর নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিকেল সোয়া চারটায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী (শোভন) টিএসসির মিলনায়তনে প্রবেশ করেন।

সেখানে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হককে বরণ করে নেন এবং তাঁরা দুজন কোলাকুলি করেন। এ সময় সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে কোলাকুলির পর ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, তা থেকে আমরা সরে এসেছি। তবে পুনর্নির্বাচনের দাবি অব্যাহত থাকবে। আমরা শিক্ষার্থীদের রায় মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এক সঙ্গে কাজ করব।

এই ঘোষণার কিছু পরে নুরুল হক এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য প্যানেলের নেতারা আলোচনায় বসেন।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যায় ডাকসু নির্বাচন অংশ নেওয়া পাঁচ জোটের নেতারা আলোচনা করেন। সেখানে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগপূর্বক পুনরায় ডাকসু নির্বাচন চেয়েছেন। এই দাবিতে আজ বুধবার দুপুর ১২টায় রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হয়ে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জোটের নেতারা। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের দাবি মেনে না নিলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

আলোচনা শেষে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা যেমন আশা করেছিলেন, তেমন নির্বাচন হয়নি। ছাত্রলীগ বাদে সবাই গতকাল ভোট বর্জন করেছে। কারচুপি করেও ছাত্রলীগ বাইরের সংগঠনগুলোকে ঠেকাতে পারেনি।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বলতে চাই, যেহেতু আরও অনেক প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, আমরা তাদের দাবির সঙ্গে একমত। এ নির্বাচন পুনরায় হতে হবে এবং নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছে, তাদের পদত্যাগ করতে হবে; অন্যদের অধীনে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব।

গতকাল সন্ধ্যার বৈঠকের পর নুরুল হক আরও বলেন, হাইকোর্টের আগের নির্দেশনা অনুসারে ৩১ মার্চের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই সময়ের মধ্যে নির্বাচন হোক।

তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, সব পদ নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা একচেটিয়া ভোট দিয়েছে ভিপি ও সমাজসেবা পদে; যে কারণে তারা ইঞ্জিনিয়ারিং করেও ওই দুই পদ নিতে পারেনি। আবার নির্বাচন হলে তাঁদের পুরো প্যানেল জয়ী হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে স্বতন্ত্র জোট, প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত স্বতন্ত্র জোট ও স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের নেতারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলোচনায় বসেন।

এদিকে নূর একথাও বলেছেন, ছাত্রলীগের মুখে মধু, অন্তরে বিষ। তাদের বিশ্বাস করা খুব কঠিন। ক্ষমতাসীনরা যখন সুবিধাজনক মনে করে, যখন আমাদের লাগে, তখন বুকে টেনে নেয়। আবার যখন মনে করে আমরা শত্রু, তখন মার দেয়।

মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সঙ্গে কোলাকুলির ঘণ্টাখানেক পর টিএসসিতে বাম জোটের প্যানেল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর নূর এ কথা বলেন।

নূর বলেন, বেগম রোকেয়া হলে ছাত্রলীগ আমাদের মেরেছে। গত ৩০ জুনও তারা আমাকে মেরেছিল। আজকেও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি টিএসসিতে এসেছি, কিন্তু আমাকে তারা ধাওয়া দিয়েছে।

ডাকসু নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল অনুসারে ২৫ হাজারের কিছু বেশি ভোট প্রয়োগ হয়েছে, যা মোট ভোটারের ৫৯ শতাংশ। ভিপি পদে নুরুল হক পান ১১ হাজার ৬২ ভোট। এই নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ২৫৫ জন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে