ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা সৈয়দ মো. জিয়াউল হক ওরফে জিয়াসহ (চাকরিচ্যুত মেজর) ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। মামলায় সাদেক আলী ওরফে মিঠুসহ ১৫ জনকে অব্যাহতির আবেদনও করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৩৪ জনকে।
শাহবাগ থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর গতকাল চার্জশিটটি দাখিল করা হয়। মামলাটির পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২৫ মার্চ।
জিয়া ছাড়া অপর আসামিরা হলেন- মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আকরাম হোসেন ওরফে আবির, মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম ওরফে হাদী, আরাফাত রহমান, শফিউর রহমান ফারাবি। মেজর জিয়া ও আকরাম হোসেন পলাতক রয়েছেন।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, অভিজিতের লেখালেখি ও ভিন্নমত পোষণের জন্য তাঁকে অনেক আগেই টার্গেট করা হয়। তার ‘বিশ্বাসে ভাইরাস’ ও ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামক দুটি বইকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় আনসার আল ইসলাম।
আসামি মোজাম্মেল হুসাইন, আকরাম হোসেন, হাসান ও আবু সিদ্দিক হত্যাকাণ্ডের আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৯২/২ নম্বর বাসা ভাড়া নিয়ে অভিজিৎকে অনুসরণসহ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন। আসামি মোজাম্মেল রেকি টিমের নেতৃত্ব প্রদান করাসহ অপারেশন শাখার মকুল রানাকে অনুসরণসহ হত্যাকাণ্ডের সার্বিক সহযোগিতা করেন। আবু বকর, আকরাম ও হাসান ব্লগার অভিজিৎ রায়কে অনুসরণ এবং রেকি করাসহ হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের পালাতে সহায়তা করেন। আসামি আরাফাত রহমান, আলী ওরফে খলিল, অনিক ও অন্তুর ওপর দায়িত্ব হচ্ছে টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করা। আর অভিজিৎকে তারা চারজনই চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কোপায়। অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকেও কুপিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধ আঙুল কেটে ফেলে। আসামি জিয়া, সেলিম, মুকুল রানা, মোজাম্মেল, আবু সিদ্দিক, আকরাম ও হাসান অভিজিৎকে কোপানোর সময় ঘিরে রাখে।
আসামি সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আব্দুর সবুর ওরফে রাজু সাদ ও মাইনুল হাসান শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অব্যাহতি আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি ও আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায়। মকুল রানা খিলগাঁও এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। আসামি সেলিম, হাসান, আলী ওরফে খলিল, অনিক ও অন্তের নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বের হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা।