মামলার তদবির করতে গেলেন থানায়। বসলেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে। বললেন চা আনতে। কিন্তু গরম চা ঠাণ্ডা হওয়ার আগেই ফুরিয়ে গেল এএসপির ক্ষমতা। গ্রেফতার হলেন ওসির কক্ষেই।
গত বুধবার (১৩ মার্চ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় কাওসার আলম (৩৫) নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । জানা গেছে ওসির কক্ষে গিয়ে কাওসার আলম নিজেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বলে পরিচয় দেন। কিন্তু তার গতিবিধি দেখে সন্দেহ হয় বুদ্ধিমান ওসির।
ওসি মুহা. সেলিম উদ্দিন গোপনে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এই নামে কোনো এএসপি নেই। ফলে চা আর পান করা হলো না কাওসার সাহেবের। চায়ের কাপ ধরার আগেই হাতে পরানো হলো হাতকড়া।
কাওসার আলম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার সঙ্গে থাকা অপর দুই ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- ফায়েজ মিয়া (৩৫) ও কাউসার মিয়া (২৪)। এই দুই জনের বাড়ি দারমা গ্রামে। কাওসারের মামা শ্বশুর হন তারা।
মুহা. সেলিম উদ্দিন জানান, বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে ফায়েজ ও কাউসারকে নিয়ে থানায় আসেন কাওসার। কাওসার থানায় নিজেকে ঢাকার মালিবাগ পুলিশের বিশেষ শাখার জ্যেষ্ঠ এএসপি বলে পরিচয় দেন। এরপর তিনি চা-কফি আনার আদেশ করেন।
তিনি জানান, ফায়েজ ও কাউসারের একটি অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে এসেছেন। একপর্যায়ে কাওসারের কথাবার্তা ও চলাফেরার মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়।
তখন তিনি জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে মালিবাগ থানায় খোঁজ নেন। সেখানে কাওসার আলম নামে কোনো এএসপি নেই বলে জানতে পারেন। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে কাওসার দুটি পরিচয়পত্র দেখান। সেগুলো ভুয়া বলে শনাক্ত করে থানার পুলিশ। পরে তাদের আটক করা হয়।
কাওসারের কাছ থেকে দুইটি পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর একটিতে ইংরেজিতে বাংলাদেশ পুলিশ, বিশেষ শাখা ও ডিউটি পাস লেখা। এখানে নামের জায়গায় ক্যাপ্টেন কাওসার (মাস্টার) লেখা। পদবি এএসপি, স্থান বঙ্গভবন, ২২ নভেম্বর ২০১০ থেকে ২২ নভেম্বর ২০৩৫ সাল পর্যন্ত মেয়াদ লেখা।
অন্য পরিচয়পত্রটিতে সরকারি দাপ্তরিক, বিশেষ শাখা, বাংলাদেশ পুলিশ লেখা। এখানে নামের জায়গায় এম কাওসার আলম (মাস্টার) লেখা। পদবিতে এসি (পুলিশ), সংস্থা বঙ্গভবন, বাংলাদেশ, বিশেষ শাখা (পুলিশ) লেখা রয়েছে। উভয় পরিচয়পত্রে কাওসারের ছবি সংযুক্ত।
ওসি সেলিম উদ্দিন জানান, ওই তিনজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দেওয়া হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।