মোহাম্মদপুরের বছিলায় তুরাগ নদের ভরাট করে ফেলা চ্যানেলকে আগামী দুই মাসের মধ্যেই আগের রূপে ফেরানোর আশা করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আমিন মোমিন হাউজিং নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান চ্যানেলটি অবৈধভাবে ভরাট করে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করেছিল। সম্প্রতি চ্যানেলটি দখলমুক্ত করে সেখানে খননকাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ।
গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগতীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। অভিযানে ইতিমধ্যে ছয়টি আবাসন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে। এসব আবাসন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমিন মোমিন হাউজিং তুরাগের একটি চ্যানেল ভরাট করে সেখানে প্লট বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছিল। অভিযানে চ্যানেলটি দখলমুক্ত করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, তুরাগতীর থেকে দৈর্ঘ্যে প্রায় ২ হাজার ৮০০ মিটার আর প্রস্থে প্রায় আড়াই শ মিটার দখল করেছিল আমিন মোমিন হাউজিং। চ্যানেলটি উদ্ধারের পর তা সচল করতে প্রায় আট লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করতে হবে। ৬ মার্চ থেকে খননকাজ শুরুর পর ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই কাজ দ্রুত শেষ করতে বিআইডব্লিউটিএর একমাত্র উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ২৬ ইঞ্চি কাটার সেকশন ড্রেজার নিয়ে আসা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে পুরো চ্যানেলটি আগের রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
গতকাল শুক্রবার দেখা গেছে, সেখানে সাতটি এক্সকাভেটর ও তিনটি ড্রেজার মাটি খননের কাজ করছে। গত ১০ দিনেই সেখানকার চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। খননকাজ শেষে মাটির স্তূপ করে রাখা হয়েছে। খননের কারণে চ্যানেলের আকৃতি ফুটে উঠছে।
খননকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি জানান, সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খননকাজ চলে। মাঝেমধ্যে রাতেও কাজ করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাঈদুর রহমান খননকাজ তত্ত্বাবধান করছেন। তিনি নিজেও এর তদারক করছেন।
তিনি বলেন, চ্যানেলটিকে আগের রূপে ফেরাতে দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে কাজের অগ্রগতি দেখে মনে হচ্ছে, দুই মাসের আগেই তা শেষ হবে।
উল্লেখ্য,গত ২৯ জানুয়ারি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কামরাঙ্গীরচরের খোলামোড়া ঘাট থেকে অভিযান শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার অভিযান চলে তুরাগতীরে সাভারের আমিনবাজার এলাকায়। ২৮ মার্চ পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
গতকাল সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত উচ্ছেদ হওয়া অংশ ঘুরে দেখা গেছে, যেসব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগই পরিত্যক্ত। অনেকে ভাঙা ভবনের ইট সরিয়ে নিচ্ছেন। কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধ–সংলগ্ন সাইনবোর্ড এলাকা ও আশ্রাফবাদের সিরাজনগর এলাকায় বহুতল দুটি ভবনের ভেঙে ফেলা অংশ পুরোপুরি অপসারণে কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন।
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন, এবার ঢাকার চারপাশে নদীর তীরে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে হাঁটার পথ তৈরি ও পানির দূষণরোধের ব্যবস্থা করা হবে।