আরডিএ কর্মকর্তাদের প্রকল্পের টাকায় বিদেশ সফর

সারাদেশ ডেস্ক

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ফাইল ছবি

এখনও অনেক বাকি রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) ‘বারনই’ আবাসিক প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ । ২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির প্লট এখনও প্রস্তুত ও হস্তান্তরযোগ্য হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে আরডিএর চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা প্রকল্পের টাকায় দু’দফায় ৩০ দিনের বিদেশ সফর সেরে এসেছেন।

একই প্রকল্পের টাকায় আরডিএর আরেক দল কর্মকর্তা ১৫ দিনের বিদেশ সফরে যাচ্ছেন ২০ মার্চ। তারা ঘুরবেন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।

জানা গেছে, কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের প্রতিটি ট্রিপে খরচ হচ্ছে কোটি টাকার উপরে।

এদিকে, বারনই আবাসিক প্রকল্পে যারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সরকারের স্বল্পমূল্যে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নীতির বিপরীতে গিয়ে আরডিএর কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকা অগ্রিম নিচ্ছেন।

আর এ টাকায় চলছে কর্মকর্তাদের ম্যারাথন বিদেশ সফর। দ্রুত আবাসিক এলাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন না করে চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের এভাবে বিদেশ সফরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, আরডিএতে চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও অবাধে দুর্নীতি চলছে। চেয়ারম্যান ক্ষমতার মারাত্মক অপব্যবহার করছেন। এতে আরডিএসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আরডিএর বারনই আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শতাধিক প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আগ্রহীদের মধ্যে।

নগরীর বাইরে ৫ লাখ টাকা কাঠা বাজারমুল্যের জমি প্লট আকারে চড়াদামে (কাঠা প্রতি ১০ লাখ) বিক্রি করে আরডিএ বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছে। যদিও প্রকল্প সম্পন্ন করে গ্রাহকদের প্লট বুঝিয়ে দিতে এখনও বছর দুয়েক বাকি। প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। অনেক বরাদ্দ গ্রহীতা প্লটের অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে অপেক্ষায় রয়েছেন।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ৪ জুন আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জন দাস, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহিল তারিক, অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আযাদ, নগর পরিকল্পক আজমেরী আশরাফি, সহকারী নগর পরিকল্পক রাহেনুল ইসলাম রনি ছাড়াও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দু’জন কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যানের পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ ৯ জন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ সফর করেন। চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যরাও প্রকল্পের টাকায় বিদেশ সফর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একই প্রকল্পের অর্থে ৩ জানুয়ারি আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, নগর পরিকল্পক আজমেরী আশরাফি, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহিল তারিক, হিসাব কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাসহ ৬ জন এশিয়ার দুই দেশ ছাড়াও ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইটালিতে ১৫ দিন সফর করেন।

চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় দফায় একই দেশে সফর করার বিষয়ে সংস্থার অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো আপত্তি ছাড়াই অনাপত্তি প্রদান করা হয়।

জানা গেছে, ২০ মার্চ প্রকল্পের টাকায় তৃতীয় দফায় বিভিন্ন দেশ সফরে বের হবেন আরডিএ কর্মকর্তারা। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী ও একটি দুর্নীতি মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি শেখ কামরুজ্জামান, অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আযাদ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাসহ ৫ জন এশিয়ার দুটি দেশ ছাড়াও ইউরোপের কয়েকটি দেশে ১৫ দিনের সফরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

প্রকল্পের টাকায় তৃতীয় দফায় কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পের কর্মসূচিতে বিদেশ সফরের সংস্থান রয়েছে। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই তারা বিদেশ সফর করছেন। 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে