কক্সবাজারে আত্মসমর্পণকারী ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী মুক্তি পাচ্ছে

সারাদেশ ডেস্ক

ইয়াবার গডফাদাররা
সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাই ও ভাগনেসহ ইয়াবার গডফাদাররা। ফাইল ছবি

কক্সবাজারে আত্মসমর্পণকারী ৩২ গডফাদারসহ ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী মুক্তি পেতে যাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ ইয়াবা, ৩০টি অস্ত্র ও ৭০টি কার্তুজ উদ্ধারের ঘটনায় যে দুটি পৃথক মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহারের অনুমতি চেয়ে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) বরাবরে আবেদন করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।

অনুমতি পেলে জেলা পুলিশ মামলা দুটি প্রত্যাহার করে নেবে। এরপরই কারাগার থেকে মুক্তি পাবে গডফাদার ও শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।

সূত্র জানায়, ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণকারী ওইসব ইয়াবা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি চেয়ে ৫ মার্চ কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন আইজিপি বরাবর দুটি পৃথক আবেদন করেন।

সূত্র আরও জানায়, ৮টি শর্ত মেনে তারা আত্মসমর্পণ করে। শর্তগুলো হলো- মাদক ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসা ছেড়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সমাজে সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে, ভবিষ্যতে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকবে না, মুক্তি পেয়ে নিজ নিজ এলাকায় মাদক নির্মূলে কাজ করবে, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে মাদক নির্মূল কমিটি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবে, যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদের সম্পর্কে তথ্য দেবে, আত্মসমর্পণের আগে যেসব মামলা ছিল, তা আদালতে নিজ দায়িত্বে পরিচালনা করবে; আত্মসমর্পণকালে তাদের অবস্থান থেকে যেসব মাদক, অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তা নিয়ে রুজুকৃত মামলা সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রত্যাহার ও আইনগত সহায়তা দেয়া হবে এবং মাদক ব্যবসার মাধ্যমে নিজে, পরিবার, আত্মীয়স্বজনের নামে-বেনামে অর্জিত সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি তথ্য প্রদান করে সরকারি তদন্তকারী সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হবে।

এসব শর্তাবলি মেনে মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করায় ৭ ও ৮নং শর্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে জেলা পুলিশ।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, আত্মসমর্পণের শর্ত অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মাদক ও অস্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও তাদের বিরুদ্ধে হওয়া আগের মামলাগুলো চলমান থাকবে। পাশাপাশি যদি কেউ মুক্তি পেয়ে শর্ত লঙ্ঘন করে আবার মাদকের সঙ্গে জড়ায়, তাহলে ব্যবস্থা হবে খুবই কঠিন, যা আর সংশোধনের সুযোগ থাকবে না।

১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা হলো- সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাই যথাক্রমে আবদুর শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান এবং এমপি’র ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু ও সাহেদ কামাল।

এছাড়া রয়েছে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে দিদার মিয়া, পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর প্রকাশ নুরশাদ, পশ্চিম লেদার নুরুল হুদা মেম্বার, নাজিরপাড়ার এনামুল হক মেম্বার, সাবরাংয়ের মোয়াজ্জেম হোসেন প্রকাশ ধানু মেম্বার, আলী খালির জামাল মেম্বার, শাহপরীর দ্বীপের রেজাউল করিম মেম্বার, সাবরাংয়ের সামশু মেম্বার, দক্ষিণ জালিয়া পাড়ার ইমাম হোসেন, পশ্চিম লেদার বোরহান, সাবরাংয়ের নুরুল আমিন, নাজিরপাড়ার ভুট্টোর ভাগিনা আবসার, হ্নীলার রমজান ও বড় হাবিবপাড়ার ছিদ্দিক, আলী আহমদ চেয়ারম্যানের দুই ছেলে আবদুর রহমান ও জিয়াউর রহমান, হ্নীলার পশ্চিম সিকদারপাড়ার ছৈয়দ আহমদ, নাজিরপাড়ার আবদুর রহমান, পুরাতন পল্লানপাড়ার শাহ আলম, জাহাজপুরার নুরুল আলম, হ্নীলা পশ্চিম সিকদারপাড়ার রশিদ আহমদ, ওয়ালিয়াবাদের মারুফ বিন খলিল বাবু, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, মধ্যম ডেইলপাড়ার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, চৌধুরীপাড়ার মং সং থেইন প্রকাশ মমচি ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার জুবাইর হোসেন, হ্নীলা পূর্ব পানখালীর নজরুল ইসলাম, পশ্চিম লেদার নুরুল কবীর, নাজিরপাড়ার সৈয়দ হোছন, নাইটং পাড়ার মো. ইউনুচ, সাবরাং আলীর ডেইলের জাফর আহমদ, হ্নীলা ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী, শামলাপুর জুমপাড়ার শফিউল্লাহ, একই এলাকার ছৈয়দ আলম, উত্তরলম্বরীর আবদুল করিম প্রকাশ করিম মাঝি, রাজারছড়ার আবদুল কুদ্দুছ, জাহেলিয়াপাড়ার মো. সিরাজ, সাবরাংয়ের আবদুল হামিদ, নাজিরপাড়ার মো. রফিক, নতুন পল্লানপাড়ার মো. সেলিম, নাইট্যংপাড়ার মো. রহিম উল্লাহ, নাজিরপাড়ার মো. হেলাল, চৌধুরী পাড়ার মোহাম্মদ আলম, তুলাতলীর নুরুল বশর, হাতিয়াঘোনার দিল মোহাম্মদ, একই এলাকার মোহাম্মদ হাছন, দক্ষিণ নয়াপাড়ার নুর মোহাম্মদ, সদর কচুবনিয়ার বদিউর রহমান, পূর্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, ডেইলপাড়ার আবদুল আমিন, উত্তর আলী খালীর শাহ আজম, দক্ষিণ নয়াপাড়ার আলমগীর ফয়সাল, সাবরাং ডেইলপাড়ার মো. সাকের মিয়া, সাবরাংয়ের আলী আহমদ, উত্তর শীলখালীর মো. আবু ছৈয়দ, জাদিমুরার মোহাম্মদ হাসান আবদুল্লাহ, রাজার ছড়ার হোসেন আলী, সাবরাং নয়াপাড়ার মো. তৈয়ব, উত্তর জালিয়া পাড়ার নুরুল বশর মিজি, নাজির পাড়ার জামাল হোসেন, মৌলভীপাড়ার মো. আলী এবং এই এলাকার আবদুল গনি, জালিয়াপাড়ার মো. হাশেম, পুরাতন পল্লানপাড়ার ইসমাইল, নাইট্যাংপাড়ার আইয়ুব, সাবরাংয়ের হোসন আহমদ, সাবরাংয়ের শওকত আলম, নাইট্যাংপাড়ার হাবিব, আলী খালীর হারুন, মাঠপাড়ার কামাল, সাবরাংয়ের রাসেল, ডেইলপাড়ার নুরুল আমিন, শীলবনিয়াপাড়ার আইয়ুব, জালিয়াপাড়ার আলম, লেদার হামিদ, মুন্ডর ডেইলয়ের মনজুর, লেদার রবিউল আলম, সাবরাংয়ের মৌলভী বশির, হ্নীলার মাহাবুব, বাজারপাড়ার মো. শাহ, লেদার ফরিদ আলম, লেদার মো. হোছন, জালিয়াপাড়ার নুরুল আলম, লেদার জহুর আলম, আবু তাহের, ফুলের ডেইলের আলী নেওয়াজ, আবু তৈয়ব ও কক্সবাজার শহরের ইয়াবা গডফাদার শাহাজান আনসারি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে