ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রশাসনের কাছে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় কিছু অস্পষ্টতা ও অপর্যাপ্ততা ছিল বলে স্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।
১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং টকশোতে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করা হচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থান জানায়।
এতে বলা হয়, নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে পারেননি, কারও ভোট অন্য কেউ দিয়েছেন, কেউ হেনস্তার শিকার হয়েছেন- এমন কোনো অভিযোগ কোনো রিটার্নিং অফিসার পাননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপরাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো কোনো মহল বা ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ছাড়াই ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে মনগড়া মন্তব্য ও ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন, সর্বোপরি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, যা কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় যে কোনো গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়, অনুপ্রেরণা দেয়; কিন্তু বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক আচরণকে গ্রহণ করে না।
নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনকালে, বিচ্ছিন্ন দু-একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছাড়া ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। এর প্রশংসা করার মতো উদার মানবিক মূল্যবোধ সবার মাঝে বিরাজ করলেই বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতি গভীরভাবে উপকৃত হবে।
বিবৃতিতে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে যদি কোনো অনিয়ম, অসততা, কারচুপি, জালিয়াতির বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ কারও কাছে থাকে, তাহলে সেসব সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করলে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা প্যানেল থেকে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অসত্য, উসকানিমূলক, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর অপতথ্য ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শিগগিরই দূর হবে এবং সত্য আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশ ও সমাজের টেকসই উন্নয়ন, মর্যাদা ও মূল্যবোধ সংরক্ষণে সবার সহযোগিতাও চায় বিশ্ববিদ্যালয়।
এতে আরও বলা হয়, দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মতো বিরাট কর্মযজ্ঞের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় অনিচ্ছাকৃত কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে; যা নিখুঁত নয়। ব্যবস্থাপনার নীতিমালায় কিছু অস্পষ্টতা ও অপর্যাপ্ততা ছিল।
ফলে কোথাও কোথাও বিভিন্ন প্রশ্ন, যেমন- ভোটারের হাতে অমোচনীয় কালি লাগানো, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার প্রভৃতি উত্থাপিত হয়েছে। এসবের সংস্কৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের ইতিহাসে নেই। তবে ভোটারের স্বাক্ষর গ্রহণ ও পরিচয়পত্র পাঞ্চ করে ব্যালট পেপার দেয়া হয়েছে।
এখানে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ও অংশগ্রহণকারী হলেন যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও দেশের সেরা মেধাবী মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার্থী।
তবে ভবিষ্যতের জন্য ভাবনার অনেক সুযোগ করে দিয়েছে এবারের অভিজ্ঞতা। ভোটগ্রহণ ও ভোট প্রদান প্রক্রিয়ায় উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর নেতিবাচক প্রভাবের কথা কেউ বলতে পারেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও পীড়াদায়ক যে, বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলে একটি অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। অবশ্য ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই এটি চিহ্নিত হওয়ায় বড় ধরনের কর্মবিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়।
ভোটকেন্দ্রের বুথ সংলগ্ন একটি কক্ষ থেকে ব্যবহৃত (সিল মারা) ব্যালট ভর্তি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি উপাচার্য অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই হলের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেন। চিফ রিটার্নিং অফিসারকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষকে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে উপাচার্য একজন নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানের জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসিও তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
চিফ রিটার্নিং অফিসার নতুন করে সংশ্লিষ্ট হলের ব্যালট পেপার ছাপিয়ে নতুন ঘোষিত সময়ানুসারে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম শুরু করেন।
এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো অস্বচ্ছতা বা শৈথিল্যের প্রশ্ন অবান্তর। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যেই সব ভোটকেন্দ্রে দীর্ঘলাইনের অবসান ঘটে এবং উপস্থিত সব শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের, কমবেশি, আগে-পরে স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ভোটাধিকার প্রদান করতে সক্ষম হয়। এতে আরও বলা হয়, অত্যন্ত বিভ্রান্তিকরভাবে রোকেয়া হলে ব্যালট পেপার উদ্ধারের কথা বলা হয়। মূলত ওই ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ছিল না; চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক প্রেরিত ট্রাংকের মধ্যে সংরক্ষিত ছিল। সেসব ব্যালট পেপারে কোনো সিল মারা ছিল না; ছিল অক্ষত, অটুট (রহঃধপঃ) অর্থাৎ প্যাকেটভর্তি, অব্যবহৃত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, এখন পর্যন্ত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজের কোনো পর্যায়ে কোনো অনিয়মের বা ব্যত্যয়ের কোনো প্রশ্ন কোনো শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী উত্থাপন করেননি। এতে বলা হয়, ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল বিলম্বে প্রকাশ নিয়েও এক ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে।
আসলে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও রোকেয়া হলের উত্থাপিত কতিপয় প্রশ্নের স্পষ্টীকরণ ও সমাধান করার প্রক্রিয়ায় এ দুটো হলে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। সেজন্য ভোটগ্রহণের সময়কাল প্রলম্বিত হয়। ভোট গণনার মেশিন সংখ্যা কম থাকায় এক হলের ভোট গণনার পর অন্য হলের ভোট গণনা করতে হয়েছে। এতে কোনো কোনো হলের ভোট গণনা সম্পন্ন করতে দেরি হয়েছে।
সর্বশেষ সুফিয়া কামাল হলের ফলাফল পাওয়া গেছে রাত প্রায় ১২টায়। এভাবে ১৮টি হলের প্রাপ্ত ফলাফল সমন্বয় করে ডাকসুর চূড়ান্ত ফল তৈরি করতে সেদিন রাত ৩টা বেজে যায়। এরপর রাত সাড়ে ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার ‘বিব্রতবোধ করেছেন’ এমন বক্তব্যের বিষয়ে বলা হয়, অক্লান্ত পরিশ্রম, স্বচ্ছতা, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকার পরও দু-একটি কেন্দ্রে অনাকাক্সিক্ষতভাবে কিছু ঘটনা ও প্রশ্ন উত্থাপনের ফলে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।
ফলে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বিব্রতবোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন। এটিকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই।