১৬ বছরের কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ নোবেল শান্তির মনোনয়নে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গ্রেটা থুনবার্গ গত বছরের আগস্টে সুইডেনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। ছবি: টুইটার
গ্রেটা থুনবার্গ গত বছরের আগস্টে সুইডেনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। ছবি: টুইটার

গ্রেটা থুনবার্গ গত বছরের আগস্টে সুইডেনে নিজের মতো করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। সুইডেন পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে তার ‘স্কুল স্ট্রাইক’ আন্দোলনে অনেক স্কুলশিক্ষার্থী অনুপ্রাণিত হয়। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে অনেক দেশে। নজর কাড়ে বিশ্বের। সে সময় জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি উপেক্ষা না করতে সরকারপ্রধানদের প্রতি আহ্বান জানায় সে।

গ্রেটা থুনবার্গ ২০১৮ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু সামিটে সবাইকে সতর্ক করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও সতর্ক করে সে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যতম প্রিয়মুখ ১৬ বছর বয়সী সুইডিশ কর্মী গ্রেটা এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান ও এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার ১০৫টি দেশের ১ হাজার ৬৫৯টি শহরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী কর্মকাণ্ডের আশায় আন্দোলন-সমাবেশ হয়েছে। এই আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।

নরওয়েজিয়ান সমাজতান্ত্রিক সাংসদ ফ্রেডি আন্দ্রে ওভস্টগার্ড বলেন, ‘আমরা গ্রেটা থুনবার্গকে মনোনীত করেছি। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমরা কিছু না করলে যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব ও উদ্বাস্তু বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। গ্রেটা থুনবার্গ একটি গণ-আন্দোলন শুরু করেছে, যা আমরা শান্তি প্রচারে অবদান হিসেবেই দেখি।

গত বছরের আগস্টে গ্রেটা থুনবার্গ প্রতি শুক্রবার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিবাদী ডাক দিতেই সে স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দেয়। পোল্যান্ড ও দাভোস ফোরামে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার পর সারা বিশ্বে অনেক স্কুলপড়ুয়ার জন্য উদাহরণ হয়ে ওঠে সে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে তার অনুরোধ, জলবায়ু পরিবর্তনের আসন্ন পরিণতি যেন উপেক্ষা করা না হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সতর্ক করে গ্রেটা। ২০১৮ সালের শেষের দিকে এবং জানুয়ারিতে দাভোসে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের সময়ই গ্রেটা নেতাদের সতর্ক করে দেয়। গ্রেটা থুনবার্গ বলে, ‘পরিবর্তন আসছে। তা ওদের পছন্দ হোক বা না হোক।’

মনোনয়নের খবর পেয়ে টুইটারে গ্রেটা লিখেছে, ‘এই মনোনয়নের জন্য আমি সম্মানিত ও কৃতজ্ঞ। আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য # স্কুল স্ট্রাইক শুরু করেছি। যত দিন করতে হয় তত দিনই

গ্রেটা থুনবার্গ পরিবেশ রক্ষার জন্য সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করে গত বছর। এই বয়সে পরিবেশ সচেতনতায় তার নেতৃত্ব নজর কেড়েছে পুরো বিশ্বের। প্রভাবশালী টাইম ম্যাগাজিনের বিচারে গত বছর কম বয়সী প্রভাবশালীদের তালিকায় ছিল থুনবার্গ। মূলত শিক্ষার্থী ও যুবাদের পরিবেশ রক্ষার কাজে নিয়োজিত হতে উদ্বুদ্ধ করে গ্রেটা। পরিবেশ সচেতনতার উদ্দেশ্যে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনেও নেমেছিল সে। গত বছরের আগস্টে সে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সুইডেনের পার্লামেন্টের সামনে অনশনও করে। এরপরই আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার বক্তব্যে নজর কাড়ে।

জাতীয় রাজনীতিবিদরা এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারেন। গত সপ্তাহে নরওয়ের নোবেল কমিটি জানিয়েছে, এই বছরের পুরস্কারে ৩০৪ জন প্রার্থীর নাম রয়েছে, যার মধ্যে ২১৯ জন ব্যক্তি এবং ৮৫টি প্রতিষ্ঠান।

পরিবেশ রক্ষার্থে এই কিশোরীর অবদানের কথা মাথায় রেখেই তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গ্রেটা থুনবার্গ যদি এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতে, তাহলে ফের নতুনভাবে লেখা হবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাস। কারণ, গ্রেটাই হবে সবচেয়ে কমবয়সী নোবেলজয়ী। এর আগে ২০১৪ সালে পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ১৭ বছর বয়সে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে